খরা
– নূরুল আযম মামুন
রোদ থেকে রোদ সরিয়ে রাখি দূরে।।
বিশ্বাসী বুকগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
অন্ধকারে, কেউ কাউকে দেখে না
অন্ধকারে, কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।
জীবনের জলসা তবু থেমে নেই।।
পলির পচন থেকে উঠে আসে ঘ্রাণ,
দশ দিগন্ত জুড়ে বাতাসেরা বয়ে যায় সে খবর,
ফসলের স্বপ্ন নিয়ে
ঘরে ফিরে যায় দ্বায়গ্রস্থ কৃষক
নিষিদ্ধ দেহের বুকে স্বপ্ন জাগায়
তরুণ চাষা,
চৈত্রের মাঠে সিদ্ধ হবে তার
জীবনের জৈবিক মহড়া।
অন্ধকারে এইসব স্বপ্ন নিয়ে মানুষেরা বাঁধে ঘর।।
দরজায় হাত রেখে নিশ্চিত স্বরে ডাক দেয় –
ও-বৌ..
বাতাস বাঁধিসনে, কবাট ছাড়
খুলে রাখ জীবনের অর্ধেক সীমানা,
যাপনের ক্ষতগুলো শুষে নিক স্বপ্নময় শীতল হাওয়া।
বীজের বন্ধন কাটে মানবিক মাটি।।
সবুজ ফনা তুলে বুকের জমিনে দোলে
ইরি আমনের ঝাড়,
ফসলের বয়স বাড়ে,
একই সাথে বোনা স্বপ্ন, তবু
স্বপ্নেরা বাড়েনা।
স্বপ্নের সোনালী প্রান্তরে এসে দাঁড়ায় ক্ষুধার্ত ইশ্বর।।
ঘুম ভাঙ্গে, জাগে
পাখি ও পৃথিবীর প্রাচীন লোকালয়,
লোকালয়ে..
বাতাসেরা বয়ে আনে জীবনের আধখানা চিটা।
ভাগ্যের বলি, ভূমিহীন ভগবান
এসে দাঁড়ায় বিলাপ ভূমির তীরে,
দু-হাত তুলে বসে সুর্যের মুখোমুখি।
সোনালী দেহ পোড়ে সোনালী ভোরে,
সোনার বানে পোড়ে সোনালী রেখা,
রেখার ভাঁজে ভাঁজে পোড়ে
আলতা। চিরুনী। আয়না
মেলার সোনালী পাড় শাড়ী,
ফ্রেমে বাঁধা মক্কা মদীনা,
শুকায় লক্ষ্মীর সুরভি সরোবর
শুভ্র রাজহংসীর দীঘল পাখা,
মাঝরাতে..
দক্ষিণের ঢেলায় পোড়ে
ষোড়শীর গোপন সানাই।।
মাঠের মরদ উঠে আসে ঘরে।
চৈত্রের ধুধু মাঠে বাতাসেরা বাঁধে ঘর।
নির্জন দুপুর জুড়ে রোদ-ও-রাখালের খেলা।
রাতের পৃথিবী ডাকে নানান সুরে।
একই সুরে প্রতিদিন ডেকে যায় কপালের কবি।
পৃথিবীর ঘুম ভাঙ্গে, মানুষের ঘুম ভাঙ্গে না।।
শুধু..
অন্ধকারে শিশির ঝরে সারারাত
স্বপ্নবোনা পৃথিবীর তীরে।।
প্রতিবন্ধকতা
– নূরুল আযম মামুন
রোদের ভেতর বসে আছি।।
আমার ঠিক উল্টো দিকেই আলো,
পিঠের কালো মসৃণ জমিনে রোদের খেলা
আমি টের পাই, অথচ
আমি বসে আছি অন্ধকারের মুখোমুখি,
আমরা সবাই যার যার মুখোমুখি বসে থাকি।।
আমাদের সামনে উজ্জল এক অনন্ত বিস্তৃত অন্ধকার।
সামনে যাবো, হাত বাড়ালেই শুধু মানুষের মুখ।
তবে কি..
অন্ধকার জেনে এতোকাল মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম ?
সামনে যাবো, হাত বাড়ালেই শুধু মানুষের মুখ।।
তবে কি..
মানুষই এতকাল অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো মানুষের মুখোমুখি ?
সামনে যাবো, হাত বাড়ালেই শুধু মানুষের মুখ।।
বুকের ভেতর রৌদ্র লুকিয়ে রেখে,
মানুষেরা চিরকাল অন্ধকার হয়ে বসে থাকে মুখোমুখি
সামনে যাবো, তাই –
মানুষের মগ্ন মলিন অন্ধকার ঠেলে এগিয়ে যাই
মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়ে ফিরি আপন ঘর,
বুকে পিঠে রোদের রুগ্ন স্মৃতি নিয়ে
বেঁচে থাকা আরেক গভীর অন্ধকারে।।
সমঝোতা
– নূরুল আযম মামুন
ভর দুপুরে সে চীৎকার করে উঠলো।
ব্যস্ত ফুটপাতে, পুরোটা রোদ্দুর জুড়ে তার থাকা চাই।
অস্তিত্বের হীনমন্যতায় দগ্ধ, আমার সরল রেখাগুলো
আর কতটুকু আকৃতি ধারণ করতে পারে!
তবুও আমি হেঁটে গেছি বহুদুর, একা একা
বুকে পিঠে রোদ ও রংয়ের স্মৃতি নিয়ে
আকৃতির সংকটে শুধু চীৎকার করে গেছি
অসম্পূর্ণ শব্দের অস্থিরতায়।
শব্দগুলো এলোমেলো ভাবে
হয়েছে শেয়ালের খোরাক।
শব্দগুলো কখনো গান হয়ে ওঠেনি,
শব্দগুলো কখনো কবিতা হয়ে ওঠেনি,
শব্দগুলো কখনো কথা হয়ে ওঠেনি,
আমাদের কথা বলা হয়নি কখনো।
মৌলিক সংঘাত এবং তাত্বিক দ্বন্ধ নিয়ে
যে যার মতো হেঁটে গেছি, আপন অহংকারে
আমি এবং আমার ছায়া,
এখনো হাটি পাশাপাশি।
কবি পরিচিতি

নূরুল আযম মামুন। জন্ম – মার্চ ২১, ১৯৮০ পশ্চিম শেহালাবুনিয়া, মোংলা, বাগেরহাটে। পিতা মো: আমীর হোসেন (বরিশাল-পটুয়াখালি সেক্টর ৯-এর মুক্তিযোদ্ধা) ও মাতা নুরুন নাহার বেগম (গৃহিনী)। সংসারে চারভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় ভাই ও বড় বোনের পর তৃতীয়। সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি সমাপ্তি ও পরে চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি অর্জন। মোংলা কলেজে এইচ এস সি ও সমাজ কল্যাণে ডিগ্রি পাস, শান্ত মারিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনলজি হতে গ্রাফিক ডিজাইন এন্ড মাল্টিমিডিয়াতে অনার্স এবং সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এ মাস্টার্স সম্পন্ন। মোংলা কলেজ এবং মোংলা পৌরসভার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালনের ভিতর দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।
কর্মক্ষেত্রে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত মোশন গ্রাফিক ডিজাইনার। বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া এবং চিত্র প্রদর্শনীতেও তাঁর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। আই ক্রিয়েশন লিমিটেড, দেশ টেলিভিশন, বৈশাখী টেলিভিশন, গ্রাফিক এসোসিয়েট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কিন এন্ড ইয়াং টেকনোলজি (চায়না) – ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে মোশন গ্রাফিক ও থ্রিডি ডিজাইনে বিশেষ অবদান রেখেছেন কর্মসূত্রে। বর্তমান এটিএন বাংলা-তে মোশন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবে কর্মরত।
মোংলার উত্তরণ পাঠাগারের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। অবদান রেখেছেন মোংলা কলেজের দেয়াল পত্রিকা “মুক্ত প্রমিথিউস” প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মোংলার উত্তরণ ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে।