পাখি গেছে উড়ে
– নরেশ বৈদ্য
দেখা যবে দিলে তুমি, ছিলো পূর্ণ সুখ
আঁখি মোর খুঁজে ফেরে সেই হাসি মুখ
দুটি হাত ছুঁয়ে আসে হারানো বিশ্বাস
সাগরের ঢেউ এসে করে বসবাস
নানা রং জেগে ওঠে মনের আকাশে
শুরু হলো পথচলা শুধু ভালোবেসে
কথা পেড়ে দিয়ে গেলে কতো উপহার
হঠাৎই জানিয়ে দিলে অলীক সাঁতার!
ধেয়ে এলো কালো মেঘ যমুনার তীরে
তির এসে লাগে বুকে যায় বুক চিরে
রাঙা মন ফিকে হলো ধূসর ধুলোয়
ইচ্ছের সমাধি পরে বাসনা চুলোয়
সুখ পাখি ডানা মেলে গেলো উড়ে দূরে
পড়ে আছে শূন্য খাঁচা চাঁদের কিনারে।
জলপরী গুঞ্জন
– নরেশ বৈদ্য
মরচে ধরা বেতাব বাগিচায় ফুল কি ফোটে আর?
তবু কেন আগুন গোলা হরপাবান
ফুসফুসে নাড়া দিয়ে যায় বারবার?
সময়ের নিরিখ বদলেছে এ কথা জানে না কে?
তাই বলে ঝরা পাতা ছুঁতে চাওয়া
অলীক ফাগুনের ছবি এঁকে!
ভালো লাগা এমন মধুময় ব্যঞ্জন বড় কি বেমানান?
জেনেশুনে ধুলোমাখা আলপথে–
সুখ স্নান কখনো কি শোভা পায়?
আগুন জ্বললো বলে মরীচিকা পিছে সটান দাঁড়িয়ে পড়া!
বুঝলে না কেন যে?
ভিজে কাঠে আর কী বা পাওয়া যায় ধোঁয়া ছাড়া।
ঠকঠক করে উঠলে কেঁপে
গোধূলি বেলার তরঙ্গে দুলে
মারীচের কথাটা একেবারে বেমালুম গেলে ভুলে!
ফাগুনের যে চেনা ছবি এক বার গেছে হারিয়ে
রসালো স্বর্ণলতিকা কি–
কখনো সে মেলবন্ধন দিতে পারে ফিরিয়ে?
বৃথা জোৎস্নার মায়াভরা পূর্ণিমা রাতে
অবাক সুখের তারা খোঁজা উষ্ণ আলিঙ্গন
আসলে যা সাপলুডু খেলা ঘরে মায়াভ্রম জলপরী গুঞ্জন।
মন জানে
– নরেশ বৈদ্য
প্রতিক্রিয়ায় কোনো দোষ দেখি না
সবটাই ধরে নেওয়া ভাবনার গালিচা বিশেষ
ব্যাকুল যমুনাও শুকিয়ে যায়
তার মানে এই নয় প্রবাহ হয়ে গেছে শেষ।
কমলকলি আবেগে অভিমান জমতেও পারে
তাতেও দোষের কিছু দেখি না
চেনা স্রোত মাঝে মাঝে–
অচেনা বাঁধে আটকে কি যায় না ?
তাই বলে নীরব মিছিলকে–
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেওয়া!একেবারে ঠিক না।
এই যে এতো এতো কথা চাপা পড়ে আছে-
মেঘেদের লুকোচুরি খেলায়
কজন বা জানে–
বুকের ভিতরে থাকে সবুজ বিস্তৃত তটের ঠিকানা?
চোখের সামনে যেটুকু ঘটে,
সেটুকুও যে সর্বদা ঠিকঠাক হয় না
তবুও ক্ষত বিক্ষত অলব্ধ সীমানা ঘৃণা স্তুপাকার করে কি?
জানি এই মনই জানে,কোনটা সত্যি আর কোনটা প্রবঞ্চনা।
বসন্ত ফাগুন
– নরেশ বৈদ্য
পূর্ণতা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা নিশ্চয়ই বেমানান নয়
সংকোচ তাই খোলসের আবরণে না ঢেকে হয়েছিলো উন্মোচন
জাগলো সাড়া জলতরঙ্গে,বাজলো মাদল যমুনায়
জীবন দ্বারে ভিড় করে উছলিত জোয়ার উজানী সন্ধিক্ষণ।
আঁখি তখন শঙ্খচিলের মতো খুঁজে বেড়ায় হরিণীর দুটি চোখ
অবুঝ মনের সবুজ সিগন্যালে খিলখিল করে নেচে ওঠে রাঙা জবা সেই ঠোঁট
পাশাপাশি বসে কাছাকাছি আসা নেহাতই ছিলো ক্ষণিকের অপেক্ষা
দূর হতে ভেসে আসে ঝর ঝর সুর,তোমাতে আমাতে আবার হবে গো দেখা।
হৃদয় তখন খোলা আকাশ,মুক্তোর উৎপাত
ফুসফুস জুড়ে গোলাপ বাগান মেমসাহেবের বসবাস
শুরু হলো পথচলা আবারও,দেখার পালা মন রাঙা গুনগুন
মুছে গেলো ফিকে রঙ,এলো ফিরে সে মধুলগন বসন্ত ফাগুন।
পেরোছো কি বুঝতে?
– নরেশ বৈদ্য
নিশি রাত বাঁকা চাঁদ তখনো ছিলো জেগে
হেমন্তের শিশির দূর্বা ঘাসের উপর স্থান সংকুলান করছিলো ধিরে ধিরে
ঝরঝরে শীতল সমীরণেরও স্পষ্ট আভাসের কোনো খামতি ছিলো না।
তখনই তোমার জানতে চাওয়ার বর্ণীল আলোতে ভেসে ওঠে মধুযামিনীর উপহার
যেথা এতোটুকু অভাব ছিলো না,স্নিগ্ধ সুভাস আশাতীত রোদ।
তবুও,নিরুত্তরের ঘন্টাটা সাইলেন্ট জোনে রইলো পড়ে
কেন জানো কি? সত্যের সাথে সখ্যতা রাখতে চেয়ে,
মনপসন্দ অনাড়ম্বর জীবনের সন্ধানে–
গতিহীন স্রোতে কবিতার মেহফিলকে ছুঁতে চায় উদাসী এ মন।
কবি পরিচিতি

নরেশ বৈদ্য। জন্ম ২৭ শে অক্টোবর ১৯৭৯, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। পিতা: স্বর্গীয় জগন্নাথ বৈদ্য,মাতা: মনোরোমা বৈদ্য। পাঁচ সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার- সোনারপুর থানার অন্তর্গত বিবেকানন্দ নগরে- কলকাতা-৭০০১৫০-স্থায়ী বাসিন্দা। পড়াশোনা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এম কম)।
কবির কলমে কবিতা জেগে ওঠে স্বতঃউৎসারিত অন্তরপ্রেরণা থেকে – জীবনের বোধের অন্তর্নিহিত চেতনায় ভাস্বর হয়ে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: জীবনের রং তুলি, প্রেমের ঝর্ণাধারা, খেয়ালী আলোর ভেলা, যৌথ কাব্য সংকলন-৬-এ ছক্কা, দোহার, আকাশ গঙ্গা ও মোহনা।