বিলাসিতা দেহের দাবি
– মো. মাহমুদ শেখ
অযথা একা একা সময় পার করতে করতে
বিষাক্ত খপ্পরে শরীরটা জর্জরিত!
আনমনা! মানুষহীন থাকতে থাকতে –
হৃদয়টা কলুষিত! কিংবা
অভক্তি ছোঁয়া অন্তরাত্মা –
আজ নিম তিক্ততাকেও হার মানিয়েছে।
বহুকাল ধরে অচেনা পথে তাকিয়ে থেকে –
চোখের সামনেই সাদা নদীর কান্নাস্রোত।
বিলাসিতা দেহের দাবি;
সবুজ রঙের একটি মাঠে গড়াগড়ি ধরলে
সমস্ত প্রক্রিয়াটি কেটে যাবে;
অশান্ত হৃদয়ে তোমার রক্তজমা তোলপাড় বন্ধ হবে।
সনাক্ত করা হোক ব্যথার সাজেশন গুলো,
সমাধানের নিমিত্তে গাইড দেয়া হবে;
ভুল পথ বিলুপ্ত হয়ে –
সঠিক নেতৃত্বের দিশা দিবে।
আলোর সঙ্গে কথা বলার দরকার আছে –
সেও কি অযথা ভুল করবে?
নাকি জীবনের উজ্জ্বল পথ উন্মুক্ত করে দিবে?
এই আগ্রহের শেষ কোথায়?
আগ্রহী হতে চায়!
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে
সত্যি! অসাধারণ সুখের সুখেন্দু শিখরে যেতে হলে
নিজেকে তৈয়ার করতে হবে,
আবিষ্কার করতে হবে নতুন স্বপ্ন!
বিলাতে হবে স্বচ্ছ, মিষ্টি ও বিশুদ্ধ আত্মা।
যার সন্ধানে সবকিছু আবার
সতেজ হয়ে ফিরে আসবে –
তোমার অসীম ভালোবাসার স্বর্গপ্রাসাদে।
মাথা গরম
– মো. মাহমুদ শেখ
কাল রজনীতে ঝগড়া বিবাদ হাতাহাতিও
আত্মার অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে।
বিশ্বাসের হাঁড়ি ফেটে চুরমার অনতিবিলম্বে
অনায়াসে বিপক্ষ হার মেনেছে।
তবুও অশান্ত অবুঝ হৃদয়ে হাহাকার বলনি
যাচ্ছে না শুধু ক্ষোভে থাকে ভরে;
ক্লান্ত আত্মা শুধু জল পান করে বারবার;
তবুও ভরে না মন রাগের তরে।
আত্মার পরিশুদ্ধি হয়নি জানি আমার কভু-
তবে কি তোর হয়েছে আজও?
কেমনে পারিস তবে সাধারণ মানুষের সনে
তর্কে জড়িয়ে মুর্খতার – ভাজও!
তর্কের শীর্ষে উঠেছে যখন আমার এ আত্মা
মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নিসৃত হলো,
বিষাক্ত খপ্পরে আমার! মন অবনতি তার;
ডরে তার কণ্ঠস্বর চেপে গেলো।
আমি থামিনা তবুও চালিয়ে যায় মুখবোমা –
মাথা গরম শুধু এ কারণে।
কেন যে বোঝে না আমার অবুঝ হৃদয়:
থামিনা কারো বারণে।
সেই রাত থেকে এখনো অবধি এ মস্তিষ্কের
পায়নি কোনো নতুনত্ব ছোঁয়া!
ক্ষোভে ফেটে এ দেহ, অন্তরালের লুকিয়ে
মাথা হয়নি শান্ত, পায়নি দোয়া।
ভুলতে পারি না
– মো. মাহমুদ শেখ
যখনই মনে পড়ে যায় শৈশবের কথা
হৃদয়ে হাহাকার ঠেলে দেয়;
নিশ্চুপ রজনীতে কান্নায় ভেঙে পড়ি
দিনগুলি হারিয়ে নিয়মে ছাই!
পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলার মাঠে
নিত্য বিকেলের ছোঁয়া দিনগুলো!
সাঁঝের বেলার রবির ন্যায় হারিয়ে আঁধারে
বয়সের সাথে সেসব হয়েছে ধুলো।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের
সাথে শৈশবের বহুস্মৃতি বুকে!
আদরে আহলাদে বন্ধু-বান্ধব,মা-বাবা;
বয়সে বয়সে সবাই দিয়েছে রুখে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ বছরের স্মৃতি
ভুলতে পারি না কভু আমি যে,
জীবনের পথচলার স্মৃতির ভান্ডার সেতো
আজো ভেসে যায় সেই ইতিহাসে।
কলেজ লাইফ সেতো প্রেম বিলাসি আর
ঘুমের ঘরে স্বপনের মতো।
পা রাখতেই কলেজের বারান্দায় দেখি হারিয়েছি
শুকনো পাতার মতো বছরগুলো যতো।
অত ভালোবাসা, শত প্রেম-মমতা আসে না
মাধ্যমিকের দিনগুলোর মত;
আজও নীরবে ভেসে উঠে চোখের কিনারে –
বন্ধুদের প্রেম বিনোদন শত।
কর্মজীবন সেতো ব্যস্ততার সেতু – সবার চোখে
বন্ধু তো দূরে! পিতা-মাতাও নিখোঁজে!
হয় না আড্ডা দেওয়া আগের মতো
বেড়ানোর কথা আপনজন কিছুতে না বোঝে।
ফিরে আসবে না কভু, ভুলতে পারি না তবু
অক্ষয়, অমর হয়ে থাকো হৃদয়ে;
দুদিনের বেহেশতো হতে যাবো হারিয়ে আমি
পড়ে রবে স্মৃতি সব দুনিয়ার গায়ে।
হেমন্তের গান
– মো. মাহমুদ শেখ
আকাশের নীল পর্দায় হেমন্তের গান
সকালে মৃদু মৃদু হিমেল হাওয়ার স্পর্শ
পশ্চিমে গোধূলির আলোমাখা আকাশপটের
এককোণে তাকিয়ে!
কাটিয়ে দিয়েছি বহুদিন, বহুকাল।
সময়ের আবর্তনে টিকে থাকতে চাইলেও
অনেক সময় নিজেকে ঠকে যেতে হয়
ঐ সুদীর্ঘ আকাশের কান্নার মতো।
মেনে নিতে হয় জীবনের জয় আর পরাজয়।
অনেকদিন বসা হয় না খোলা আকাশের নিচে
গাওয়া হয়নি হেমন্তের গান
লেখা হয় না চিঠি আকাশের ঠিকানায়,
বসা হয় না সেই নদীর পাড়ে,
লেখা হয় না কোনো কবিতা!
তুমি নেই পাশে!
নদীর স্রোতের গুঞ্জনে হারিয়ে গেছে বহুবছর
তোমার অপেক্ষার প্রহরে।
আমি কিনেছি,
তোমার পছন্দের সাদা-হলুদের কাগজ
কিন্তু তৈরী করা হয়নি প্রেমের কিসতি
ভাসানো হয় নাই নদীর বুকে
তোমার অপেক্ষায় বসে বসে হারিয়েছি
জীবনের রঙিন স্বপ্নগুলো!
পথ ভুলে গেছি!
সেই দিগন্ত বিস্তৃত খোলা ময়দানের সরু পথ।
আজ শুধু বেঁচে আছি
কবিতার ভালোবাসা নিয়ে।
কবি পরিচিতি

মোঃ মাহমুদ শেখ। জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর খুলনা জেলার তেরখাদা থানাধীন ইছামতী গ্রামে। পিতা মোঃ আবুল হোসেন শেখ ও মাতা মমতাজ বেগম। শিক্ষাজীবনে তিনি বি.এ. ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে খুলনা সরকারি বি. এল. বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স অধ্যয়নরত। বিগত আট বছর তিনি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে বেকার জীবন পার করছেন।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা ও রচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজও তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন যৌথ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বহু লেখা। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে “আঁধারে ভরা জীবন” নামে কবির একটি একক কাব্যগ্রন্থ।