স্বপ্ন
– নরেশ চন্দ্র হালদার
স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে
টুঙ্গিপাড়ার ছেলে,
জেল, জুলুম, অত্যাচারকে
দু’পায়েতে ঠেলে।
বায়ান্নতে যাত্রা শুরু
একাত্তরে শেষ,
৭ মার্চের ভাষণ ছিল
নতুন দিক নির্দেশ।
গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে
স্বাধীনতার ডাক,
পাক সেনাদের চোখ কপালে
বন্দুক করে তাক।
আপন জনের মৃত্যু দেখে
থাকে না মাথা ঠিক,
শহর ছেড়ে গাঁয়ের পথে
ছোটে দিগ্বিদিক্।
ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছোড়ে
মারে লাখে লাখ,
লাশের উপর হামলে পড়ে
শেয়াল, কুকুর, কাক।
এমনি করে ন’মাস ধরে
চলে নির্যাতন,
যুদ্ধশেষে ঢাকার মাঠে
পাকসেনাদের পতন।
স্বাধীন দেশে অবশেষে
উড়ে জয়ের নিশান,
আমরা এখন স্বপ্ন দেখি
টুয়েনটি ফোরটি ওয়ান।
ফেসবুকে বেজায় সুখ
– নরেশ চন্দ্র হালদার
এ যুগের ফেসবুক
তাতে নাকি মহা সুখ
সারাক্ষণ দিয়ে মুখ
ছেলেমেয়ে পড়ে থাকে।
ভালো ভালো ছবি দিলে
মনের মতো বন্ধু মেলে
তার সাথে প্রেম চলে
কে আর বলো পায় তাকে।
ভালো লাগলে লাইক দাও
বিনিময়ে কমেন্ট পাও
এইভাবে এগিয়ে যাও
সময় বেশ ভালো কাটে।
খেলাধূলায় নেই মন
মোবাইল নিয়ে সারাক্ষণ
পড়ে থাকলে জোকের মতন
মন কি আর বসে পাঠে?
হাজার হাজার বন্ধু আছে
বিপদে কেউ নেই কাছে
করোনার ভয়ে পালিয়ে গেছে
এখন কিন্তু শুধুই একা।
ভালো কিছু পোস্ট দিলে
সুন্দর সুন্দর কমেন্ট মেলে
ভাষাগুলো মধুর হলে
সবাইকে নিয়ে যায় দেখা।
বন্ধু হলে টেক্সট দাও
ভিডিওতে কথা কও
পছন্দমতো ছবি পাঠাও
ইচ্ছে হলে দেখা কর।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার
করতে হবে সদ্ব্যবহার
খারাপ কিছু করলে পর
সাইবার ক্রাইম আইনে পড়।
যার কাজ তার সাজে
– নরেশ চন্দ্র হালদার
আমরা যে যা না
করি যদি তা,
সেটা কি আর ভালো হবে?
তোমরা বল না।
চাষার কাজ চাষায় করে
জেলের কাজ জেলে,
আমি যদি সেসব করি
কখনও কি তা মেলে?
পেশার প্রতি দরদ যদি
থাকে ষোল আনা,
তবেই সে কাজ সফল হবে
করবে না কেউ মানা।
আমরা যেটা পারি সেটা
করবো দিয়ে মন,
আপন কাজে দেব না ফাঁকি
করি সেই পণ।
নিজ নিজ পেশার প্রতি
দিলে মনোযোগ,
সেই কাজে তার সফলতার
মাত্রা হবে যোগ।
কোন কাজই ক্ষুদ্র নয়
সকল কাজই দামী,
মন প্রাণ দিয়ে যদি
আমরা তাতে নামি।
সুযোগ এবার আসছে সবার
করতে উপকার,
দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া
সবারই দরকার।
কবি পরিচিতি

নরেশ চন্দ্র হালদার। জন্ম অক্টোবর ১০, ১৯৬৬ সালে বাগেরহাট জেলার (তখন খুলনা জেলা) মোংলা থানার (তখন রামপাল থানা) মোংলা পোর্ট পৌরসভা (তখন চাঁদপাই ইউনিয়ন)-র কেওড়াতলা গ্রামে। পিতা হরেন্দ্র নাথ হালদার এবং মাতা সুভদ্রা হালদার।
১৯৭২ সালে সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ঐ স্কুলেই পড়াশুনা। তারপর ১৯৮২ সালে চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস. এস. সি.পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার অইর ১৯৮৪ সালে মোংলা কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. সমাপ্ত। ১৯৮৮ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান। ১৯৯৩ সালে ঢাকার তেঁজগাঁও কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এড. পাশ। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে খুলনা বি. এল. কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. পাশ করেন এবং ২০১৫ সালে মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
ছোটবেলার সেই গ্রামবাংলার মাঠ-ঘাট ও প্রতিদিনের জীবনযাত্রা তার স্মৃতিতে এখনো অমর। এইসব স্মৃতি যেমন তার লেখার প্রেরণা, তেমনি তার লেখার বিষয়ও বটে। তার কবিতায় তাই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় গ্রাম্য জীবনের এই সব খুঁটিনাটি প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠকদের পরিচয় হয় সেই জীবনের সহজ-সরল স্মৃতিমধুর ফেলে আসা পুরনো দিনগুলির সাথে।