শুধুই সৃজন
– অজিত কুমার কর
সবুজের মাঝে প্রাণীরা বিরাজে
কত আদরে
প্রকৃতি জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
ফুল-পাতা-ফল শিকড় বাকল
সবকিছু কাজে লাগে
প্রজাপতি আসে ফুল ভালোবাসে
রেঙে ওঠে রেণু-ফাগে।
মাথার ওপরে সুনীল আকাশ
বিটপীর গুণে স্নিগ্ধ বাতাস
প্রাণের আরাম অমল বায়ুতে
কলিজা ভরে
প্রকৃতি জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
কেবল সৃজন কাটব না বন
এসো পুঁতি বীজ, চারা
চাই সমাদর লক্ষ্য নজর
মহীরুহ হবে তাঁরা।
কলকাকলিতে পারে ভরে দিতে
আশ্রয়ে পাখি যতো
কীটপতঙ্গ ধরার অঙ্গ
ঠিক আমাদের মতো।
পৃথিবীটা নয় শুধু মানবের
সব সৃষ্টি তো প্রকৃতি মায়ের
ভোলা অপরাধ বড় পরমাদ
বেড়াবে চরে
প্রকৃতি জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
উবে গেছে সুখ প্রকৃতি বিমুখ
নিশিদিন অনাচার
পিঠ ঠেকে গেছে সময় হয়েছে
ঢের হল নয় আর।
অঢেল অস্ত্র কোথায় বস্ত্র
খাদ্য বাসস্থান
কোথা ন্যায়নীতি শুধু দুর্নীতি
শুনে শুনে কালা কান।
মানুষ দাঁড়াবে মানুষের পাশে
শেফালিকা ঝরে উঠোনের ঘাসে
পৃথিবী আমার পৃথিবী তোমার
সাজাব ওরে
প্রকৃতি জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
দীর্ণ আকাশ দূষিত বাতাস
নেই কোনো হেলদোল
হয়নি শিক্ষা নেয়নি দীক্ষা
সবুজে ভরাও কোল।
শস্যশ্যামল দিঘিতে কমল
পাখিদের কলরব
অরুণকিরণ হাসে মাঠ বন
প্রকৃতির উৎসব।
ফিরে পাবে ধরা আপন স্বরূপ
হইবে মুখর রহিবে না চুপ
আপন কক্ষে ঘুরবে পৃথিবী
যাবে না সরে
প্রকৃতি জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
ক্ষোভ সঞ্চয় সাগরে প্রলয়
ধেয়ে আসে স্থলদেশে
মানুষের লোভ বাড়ে দুর্ভোগ
জনপদ গেল ভেসে।
গর্বের ধন সুন্দরবন
ভূপতিত তরুরাজি
ফিরাব আবার মা’র মনিহার
শুরু হল কাজ আজি।
আর কবে হবে মানুষ সজাগ
নিরীহের প্রতি ঝাড়ে যত রাগ
ক্ষমতা জাহির যেন বড় বীর
ব্যাকুল করে
জননী জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
কোনটা বিদেশ একটা তো দেশ
একটাই ধ্রুবতারা
সূর্য-চন্দ্র ওজনে রন্ধ্র
করল কে নর ছাড়া?
নিসর্গ এল উমপুন গেল
ঘটিয়ে ধ্বংসলীলা।
বারবার কেন কশাঘাত হেন
ভেঙে গেল বাড়ি টিলা
মানে না কেহই নিয়ম-কানুন
হজম করেছে শুভবোধ ঘুণ!
ভালোবাসি যদি ভূ-কে নিরবধি
কোমল করে
প্রকৃতি জোগায় এ যে তাঁর দায়
করুণা ঝরে।
পাই যেন ঠাঁই
– অজিত কুমার কর
সূর্যের মতো দীপ্তি তোমার
ভেঙেছ বিভেদ-বাঁধ
তোমার আলোকে আলোকিত হল
শতসহস্র চাঁদ।
শ্রীচরণে তব পাই যেন ঠাঁই
আর কিছু নয় ওইটুকু চাই
করেছি অনেক ভুল ও ভ্রান্তি
মাফ কর অপরাধ।
তোমার বাণীতে মুক্তির স্বাদ
আলোর বিচ্ছুরণ
যতটুকু খাদ পুড়ে হয় ছাই
বিশুদ্ধ হয় মন।
এপার-ওপার সংযোগ সেতু
ভ্রান্তির আর নেই কোনো হেতু
তোমার কৃপায় শরণাগতের
মিটে যাবে ঠিক সাধ।
তুমিও কি ভাবো
– অজিত কুমার কর
শালিখ দুটোর যখন ডাকাডাকি
তখন আমি তোমার ছবি আঁকি।
আছে তা গোছানো
তুমি কি তা জানো
তোমার কাছে এসব গোপন রাখি
ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে আমি থাকি।
যখনই যাও এপথ দিয়ে হেঁটে
ওইদিকে চোখ দেয়ালে রই সেঁটে।
মনমুকুরে তুমি
দক্ষিণা মৌসুমী
মিনিট কয়েক কীভাবে যায় কেটে
ওতে কী আর তৃষ্ণা কারও মেটে।
সেদিন যখন তাকালে এই দিকে
আমি তখন দেখছি মাধবীকে।
প্রশ্ন চোখে মুখে
দক্ষিণ অভিমুখে
যেই এগোলে কিন্নরী মুখ ফিকে
তবু আমি তাকাই অনিমিখে।
তুমিও কি আমার মতো ভাবো
তুমি আসবে, নাকি আমিই যাবো।
ভেবেভেবেই সারা
খসে না শুকতারা
দেখতে পেলে এবার ডাক পাঠাবো
পথে তোমায় কী করে আটকাবো।
কল্পলোকে দোদুল দোলায় দুলি
ফোটে না আর আফোটা ফুলগুলি।
যাবেই যদি ঝরে
কেন কুসুম ধরে
মনপাপিয়া আকুলিব্যাকুলি
কেমন করে তোমায় বলো ভুলি।
ছাড়তে পারি আকাশ-দেখা
– অজিত কুমার কর
তুমি -
চাও না আমি আকাশ দেখি
কল্পকুসুম গল্প লেখি
এগিয়ে এসে রাখতে যদি
আমার হাতে হাত
ছেড়ে দিতাম আকাশ-দেখা
আমি তৎক্ষণাৎ।
তুমি-
আসতে যদি বৃষ্টি হয়ে
জুড়িয়ে যেত প্রাণ
তোমার নূপুর শুনিয়ে দিত
টাপুর-টুপুর গান।
তুমি -
আসতে যদি কোকিল হয়ে
ঘুম ভাঙাতে রোজ
তাহলে ঠিক পেয়ে যেতাম
আমি তোমার খোঁজ।
তুমি -
কেন আমায় এড়িয়ে চল
কারণ কী তা আমায় বল
আকাশ দেখি বলেই আমি
মানুষ মন্দ নয়
মরমি মন পাবে কোথায়
রঙিন কিশলয়।
কবি পরিচিতি

ড. অজিত কুমার কর। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৪৬ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কিসমৎ জগন্নাথ চক গ্রামে। মাতা রাজবালা, পিতা কালিপদ। মৌরাজল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯৬২ সালে রামচন্দ্রপুর রাইসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইনালে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ তে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে থেকে প্রি-ইউনিভারসিটি ও ১৯৬৬ তে বিজ্ঞান বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। ১৯৬৯ এ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি গণিতে প্রথম হওয়ার ছয় বছর পর ১৯৭৫ এ ওখান থেকেই পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। সিএসআইআর এর পোস্ট ডক্টরেল ফেলোশিপ পেয়ে পুল অফিসার হিসাবে দু’বছর গবেষণা করেন। ১৯৭৬ সালে জয়শ্রী মাইতি-র সাথে শুভ পরিণয়। এরপর হুগলি জেলার নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে কুড়ি বছর অধ্যাপনার পর ২০০৫ এ গণিত বিভাগ থেকে রিডার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
তারপর প্রবেশ সাহিত্যের আঙিনায়, সহধর্মিণী ও কবি সুমনা প্রামাণিক এর অনুপ্রেরণায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ন’টি। ‘ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তাথৈ তাথৈ নাচ’, ‘পঞ্চক’ ৪খন্ড, ‘লাঞ্ছিত গোলাপ’ এবং ‘রত্নমালা’। অপ্রকাশিত ‘ছড়ার ঘড়া’, ‘ঘড়া ঘড়া ছড়া’, ‘হাঁড়ি ভরা ছড়া’ ‘এক কড়া মিঠা ছড়া’, ‘কীর্তিমান’, ‘মহৌষধ বনৌষধি’, ‘শেয়ালের উপাখ্যান’, ‘প্রেম কাননে ফুটলো ফুল’ ইত্যাদি। কবির দুটি ই-বুক ‘নীলাঞ্জনে রঞ্জিত’ ও ‘কে তুমি লাবণ্যময়ী’। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবির কবিতা, অনুগল্প ও প্রবন্ধ। বর্তমানে বাংলা-কবিতাডটকম ওয়েব ব্লগ সাইটে নিয়মিত কবিতা পোস্ট করেন। ই-ম্যাগাজিনেও কবিতা প্রকাশিত হয়। অবসর জীবন কাটছে সানন্দে সারস্বত সাধনায় পাঁশকুড়ার জয়াকুঞ্জে।