বাসুদেব পাল – কবিতাগুচ্ছ – ৪

অনন্তলোক

– বাসুদেব পাল

ঐ দূর অনন্তলোকে –
অসীম শূন্যতা মাঝে,
যেখানে বীণার তার কম্পমান
তবু শব্দহীন;
সেই অজানা অনন্তলোক
অপেক্ষা করিছে সদা উন্মূখ হয়ে –
আত্মার চিরস্থায়ী আবাসন গড়ে।

এখানে অবস্থান মুহুর্তকাল
তোমার-আমার,
এরই মাঝে মিলনের বিচ্ছেদের
কত ঘনঘটা, কত দ্বন্ধ, কত কথা,
কত না পাওয়ার ব্যথা,
অন্তরের ব্যাকুলতা, চঞ্চল হৃদয়।

এরই মাঝে গোত্রে-গোত্রে, বর্ণে-বর্ণে
ধর্মে–ধর্মে দ্বন্ধ লেগে আছে
অজ্ঞতার অসীম অন্ধকারে।

এখানে নিথর দেহ পুড়ে হবে ছাই,
অথবা রবে পড়ে –
কবরের গাঢ় অন্ধকারে;
অবনশ্বর আত্মার হবে
চিরন্তন প্রস্থান –
অসীম অনন্তলোকে।

প্রলাপ

– বাসুদেব পাল

আজও অমাবস্যার রাতে
নিদ্রাহীন চোখে চাঁদের আলো খুঁজি।
বসন্তের দখিনা হাওয়ার মাঝে
নগ্ন পায়ে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে
ছুটি কাশফুলের জন্য।
বৃষ্টি ঝরা সন্ধ্যায়
রাস্তার মোড়ের নুয়ে পড়া বটগাছের
কচি পাতায় এক টুকরো কুয়াশা দেখতে
মনে বড় আফসোস জাগে।
কখনো চৈত্রের রৌদ্রঝরা দুপুরে
বিলের মাঝে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা খুঁজি।
অতল সাগরে খুঁজে পেতে চাই
একটুখানি পলিমাটি।
সাহারার তপ্ত প্রান্তরে ছুটে চলি অবিরাম,
এখানে বালু পিষে বের করতে চাই জলকনা।
রক্তাক্ত পায়ে টিলার মাঝে ছুটে
শিলার মাঝে খুঁজি প্রাণের স্পন্দন।
প্রলাপ শুনে হাসছ মধুমিতা?
কিন্তু প্রলাপ যে বড় ভালো লাগে আমার!
অবাস্তব স্বপ্ন দেখতে বড় ভালোবাসি আমি –
তাইতো তোমার ভালোবাসা পাব না জেনেও
অন্যের ভালোবাসা পায়ে দলে
তোমার ভালোবাসা খুঁজি।
তোমাকে পাব না জেনেও
তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি।

বিষণ্ণ প্রহরে

– বাসুদেব পাল

আবার হয়তো দেখা হবে,
তার সাথে –
কোন একদিন,
তখন বসন্ত দিন ফুরিয়ে গেছে,
প্রজাপতি চলে গেছে দূরে,
থেমে গেছে ভ্রমরের গান,
সোনালী ফসল গেছে কৃষকের ঘরে,
মাঠে শুধু পড়ে আছে খড়।

আবার হয়তো দেখা হবে,
তার সাথে,
কোন একদিন –
কোন এক বিবর্ণ প্রহরে।
বসন্তে নয় , শরৎ অথবা হেমন্তে নয়,
গ্রীষ্মের কোন এক তপ্ত দুপুরে।
তখন নদীবুকে শুকিয়েছে জল,
তার মুখ হারিয়েছে রঙ।

আবার হয়তো দেখা হবে,
তার সাথে –
কোন এক শীতের সকালে –
কোন এক নিঃসঙ্গ সময়ে।
তখন গাছের শাখা হারিয়েছে পাতা,
তখন দেহের ত্বক হারিয়েছে শোভা ,
তখন হয়তো হবে দেখা –
মুখোমুখি কোন এক বিষন্ন প্রহরে।


কবি পরিচিতি

বাসুদেব কুমার পাল। জন্ম রামপাল উপজেলার বড়দিয়া গ্রামে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে, পিতা মণিদ্রনাথ পাল ও মাতা সরোজিনী পাল। বি, এসসি(অনার্স) ও প্রাণিবিজ্ঞানে এম,এসসি ডিগ্রী অর্জনের পর এখন আমড়াতলা চাঁপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে এখন কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত – স্ত্রী লাবনী পাল এবং বাণী ও বর্ণ নামে দুই সন্তানের জনক।

ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। ছাত্রজীবনেই খুলনার বিভিন্ন দৈনিকে অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে খুলনার দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে কবির কবিতা। এছাড়া তিনি উপন্যাসও লিখে থাকেন। – এ পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাস একটি – স্বপ্নের মৃত্যু, অপ্রকাশিত উপন্যাস চারটি। তিনি আরো লিখেছেন ছোট গল্প ও ছোটদের জন্য ছড়া এবং রচনা করেছেন আধুনিক গান। শখের বসেই তার লেখালেখি, অবসর কাটে লিখে ও বই পড়ে। কবির লেখার ভিতর সম-সাময়িক বিষয় ও প্রকৃতিই প্রধান্য পায় বেশী।