অনিমেষ বিশ্বাস – কবিতাগুচ্ছ ৩

জাতিস্মর

– অনিমেষ বিশ্বাস

তোমার চোখ মায়াবী ফোয়ারা দৈপায়নের বেদবাক্য লেখে
হিম শীতল প্রহরে, জাহ্নবীর কলসী ভরা অমৃত সুধা হয়ে ওঠে
কালীয় যমুনায় নামে কামনায় সুশোভিত পুষ্পক রথ!
আরেকবার জোঁয়ার আসুক ভাসুক ভাঙুক পাঁড়,
যে চোখে বিশ্বামিত্রের প্রেম শকুন্তলা জন্ম আখ্যান
নিগৃহীত, দুষ্মন্তের প্রেমও ,আমি তা দেব না তোমারে।
নয়নের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আঁখির যে স্বপ্ন আঁকাআঁকি,
রইল পড়ে ইন্দ্রের সভায় ঊষার আকুতি ভরা নীরে
সে চোখ তুলে ধীরে মায়াবী কাজলে এই মন ভার
নামবে না আর ,অদেখার আদলে রূপ ফিকে রংয়ে তার,
দুরে নয় এস কাছে, ঐ চোখে পুনর্জন্ম নেব বারংবার।

অণ্বেষণ

– অনিমেষ বিশ্বাস

খুঁজেছি তোমায় কবিতায়
শব্দের ছাউনি, ছন্দের গাঁথুনিতে,
উপমা ও রূপকের শরীরখানি
ছুঁয়েছে হৃদয়!
যান্ত্রিকতার তবু ঘটেছে অবসান
প্রকৃতির রূপরেখায়,
খুঁজেছি তোমায় অস্পষ্ট বাক্যের স্পষ্ট ভাষণে,
এ চোখ লোলুপতা ভুলেছে!
তোমার নিত্যকার চাঁদ-তারা আলো বিলিয়েছে
এ মৃত্তিকার ঘাসফুলে।
তোমারে খুঁজেছি অবসন্ন জ্যোত্‍স্নায় ,
প্রচ্ছন্ন গোধুলির পশুরের চরে
মুছেছে অবসাদ গুচ্ছ গাঁয়ের সংগ্রামী জীবন
জীবিকার চাকা নেটের জালে চিংড়ির রেণু,
সুতার ফাঁসে রুপোলি ইলিশ,
ইলশেগুঁড়ি ধুয়েছে শ্রমে ভেজামুখ।
তারপরও তোমাকে খুঁজতে গিয়ে
আচ্ছন্নতা ভেঙেছে ও পাড়ের কথিত শান্তি পল্লী!
রোমান্স হারায় দৃষ্টি,
উদরপূর্তির অভিশাপে ক্লিষ্ট
রং মাখা রমণীর অভিশপ্ত বাসর।
ঝিম ধরে চেতনায়
কবিতা মিলিয়ে আসে
দৃষ্টির সীমানায় কাশফুল ধুসরতা মেখে যায় ভেসে বেনোজলে,
কুপির আলোয় রুগ্ন শরীর জ্বেলে
আলো আঁধারির আবেগহীন ভোগের প্রসাদ সাজায় ,
পাশবিক কামনায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় মোমাবাতির শরীর!
এর থেকে বাস্তবতার কাব্য কি হয় আর?
আমি কোন দুর্বিনীত দুঃসাহসে খুঁজব তোমায়
নৈসর্গিক পংক্তিমালায়।

অব্যক্ত প্রেম

– অনিমেষ বিশ্বাস

তোমাকে কখনোই বলিনি ভালবাসি!
নিজেই হয়ত বুঝিনি নিগূঢ় ভাব,
কি অর্থ গহীন মনের কোনে?
জমা বরফের হিমায়িত বাষ্পে
বাতাসের অনাবিল প্রেম
শুধু গলে আর গড়িয়ে,
স্বরূপে ফিরেছে তরল!
সে কি অবশেষ রেখেছিল? সময়ের বুকে!
প্রয়োজনই তাকে বদলেছে বদলের খেলায়,
তবে শাশ্বত প্রেমের অমর কাব্য লিখব কোন শীলালিপিতে?
অক্ষয় ভাস্কর্যে
আমার পৃথিবীতে প্রতিপলের ক্ষয়
প্রতিক্ষণে ভ্রুকুটি শানায়,
বোকা ঠোঁট আর ফোটায় না বুলি
জাগতিক মিথ্যার চর্চায়!
যতটুকু তার বুঝে নিয়েছি
অসার স্বপ্নের ঘর কালের বালুয়াড়ি
কত কত জীবনকে ভাসিয়েছে মিথ্যে প্রবঞ্চনায় ,
প্রতারক অনুভূতি মোহের শিঁকড় ফেলে
চেতনার মৃত্তিকায় ছড়িয়েছে বিষ।
তাই নির্বোধের মত কাউকে বলি না -“ভালবাসি”।


কবি পরিচিতি

অনিমেষ বিশ্বাস। জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং মোংলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী মোংলা কলেজ) হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ হতে প্রকৌশলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশুনা। কোর্স সমাপ্ত করার পর প্রাণ আরএফএল গ্রুপে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে ইইউবি-তে ইইই বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে কোর্সটির শেষ সেমিষ্টারে অধ্যয়নরত।

ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। পড়া থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার – টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। এ পর্যন্ত ছয়টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ভাটিরদেশ অনলাইন পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছেন সহযোগী তথ্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য সাধনায় আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।