আপন পর
– নরেশ চন্দ্র হালদার
আমরা যাদের আপন ভাবি
তারা কেহ আপন নয়,
এই পৃথিবী রঙ্গমঞ্চ
করছে সবাই অভিনয়।
‘‘তুমি আমার আমি তোমার”-
এটা শুধু কথার কথা,
করোনা ভাইরাস দিয়ে গেছে
মোদের কাছে সেই বার্তা।
‘‘তোমায় ছাড়া বাঁচবো না”-
এটা চরম মিথ্যা কথা,
লক ডাউনে কেটে গেছে
দূরে থাকার মিথ্যা ব্যথা।
কে আপন আর কে পর
বোঝা যায়নি এতকাল,
কোয়ারেন্টাইন বুঝিয়ে গেল
ভালোবাসা সবই ছল।
আসবে একা, যাবে একা
এটাই চরম সত্য,
আর সকলই মেকি ফাঁকি
এখন পাকাপোক্ত।
সত্যিকারের ভালোবাসা
হলো যে দুর্লভ,
স্বার্থ ফুরালে কেটে পড়ে
কর সবে অনুভব।
মা বাবার ভালোবাসা
এটাই কেবল খাঁটি,
অন্য সকল ভালোবাসায়
আছে প্রচুর ত্রুটি।
ভুলে ভরা জীবন মোদের
করলে কোন ভুল,
সারা জীবন কাঁদতে হবে
পাবে না কোন কূল।
চুরি ও দান
– নরেশ চন্দ্র হালদার
এক দিকে আছে চুরি চামারি
আর এক দিকে দান,
এসব দেখে চোরের কি আর
থাকতে পারে মান?
ভিক্ষুক দিল শেষ সম্বল
দশ হাজার টাকা,
চোরেরা কিন্তু অন্যদিকে
করছে সবই ফাঁকা।
কি বিচিত্র দেশের মানুষ
বোঝা বড় দায়,
করোনা যুদ্ধে দিচ্ছে সবাই
নিজের পরিচয়।
মাটির নিচে চালের গুদাম
পুকুরে চাল আছে,
খাটের মধ্যে তেলের খনি
পেলাম অবশেষে।
পুরুষ চোরের পাশাপাশি
পেলাম নারী চোর,
এসব দেখেই কাটছে সবার
সকাল-সন্ধ্যা, ভোর।
করোনা যুদ্ধে বাঁচলে পরে
দেখবো অনেক কিছু,
খারাপ কিছু দেখলে সবার
মনটা হবে নিচু।
ভালো কিছু দেখতে সবার
জাগছে মনে আশা,
মন্দকে জয় করেই তবে
নতুন ভাবে বাঁচা।
ধর্ম ও মানবতা
– নরেশ চন্দ্র হালদার
আমার ধর্ম সবার সেরা
এমন বড়াই করে,
ধর্ম রক্ষার জন্য তারা
জীবন দিতে পারি।
ধর্মের আবার ছোট বড়
কেমন করে হয়?
নিক্তি দিয়ে কখনও তার
বিচার করা যায়?
হাসপাতালের বেডে শুয়ে
যখন রক্ত লাগে,
ধর্ম মেনে রক্ত নেয়ার
ইচ্ছা তখন জাগে?
জীবন রক্ষা জীবের জন্য
যখন বড় হয়,
প্রাণ বাঁচানোর জন্য তখন
ধর্ম চলে যায়।
ধর্ম নিয়ে এই ধরাতে
হয়েছে বহু যুদ্ধ,
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
হয়েছি মোরা শুদ্ধ?
ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি
কিংবা মারামারি,
শেষ করে দেয় মানবতার
ধ্বংস তাড়াতাড়ি।
আজকে যখন দেশে দেশে
চলছে মহামারী,
’মানুষ’ নামেই লড়ছে সবাই
বাছ বিচার ছাড়ি।
বিশ্ব আজ এক ছাতাতে
করছে অবস্থান,
সবার উপর মানুষ সত্য
হয়েছে তা প্রমাণ।
যুদ্ধ কিংবা ধর্মের বিভেদ
আজ অতি তুচ্ছ,
সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে
মানবতা সুউচ্চ।
কবি পরিচিতি

নরেশ চন্দ্র হালদার। জন্ম অক্টোবর ১০, ১৯৬৬ সালে বাগেরহাট জেলার (তখন খুলনা জেলা) মোংলা থানার (তখন রামপাল থানা) মোংলা পোর্ট পৌরসভা (তখন চাঁদপাই ইউনিয়ন)-র কেওড়াতলা গ্রামে। পিতা হরেন্দ্র নাথ হালদার এবং মাতা সুভদ্রা হালদার।
১৯৭২ সালে সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ঐ স্কুলেই পড়াশুনা। তারপর ১৯৮২ সালে চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস. এস. সি.পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার অইর ১৯৮৪ সালে মোংলা কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. সমাপ্ত। ১৯৮৮ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান। ১৯৯৩ সালে ঢাকার তেঁজগাঁও কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এড. পাশ। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে খুলনা বি. এল. কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. পাশ করেন এবং ২০১৫ সালে মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
ছোটবেলার সেই গ্রামবাংলার মাঠ-ঘাট ও প্রতিদিনের জীবনযাত্রা তার স্মৃতিতে এখনো অমর। এইসব স্মৃতি যেমন তার লেখার প্রেরণা, তেমনি তার লেখার বিষয়ও বটে। তার কবিতায় তাই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় গ্রাম্য জীবনের এই সব খুঁটিনাটি প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠকদের পরিচয় হয় সেই জীবনের সহজ-সরল স্মৃতিমধুর ফেলে আসা পুরনো দিনগুলির সাথে।