কালিদাস রায় – কবিতাগুচ্ছ – ২

পোড়ামাটি

– কালিদাস রায়

রুদ্র নিঃশ্বাসে আজি বক্ষ যায় ফাটি,
সভ্যতা উপচে পড়ে মানুষ কাটাকাটি
রাজপথে; বিধাতা অংস বেঁকে বসে,
ধৈর্যহীন ধনীরা জ্বলে ওঠে আমষে।
মেতে ওঠে যার যা আছে করতে অংশন,
গরিবের বক্ষে চলে আসি বিষের দংশন !
এইতো সভ্য মানুষের সভ্যাচার।
ধনীরা দুধে-ভাতে গরিবেরা অনাহার।
প্রাকৃতিক আছে এথায় অকট বিকট,
কৃত্তিমে মিলাইছে মেলা সাজায়ে তট।
পোড়ামাটির ইটে স্বপ্ন ঝলছে লাল,
বৈদ্যুতিক তারে তারে বুনিছে জাল-
এই তো বাস্তব, নিত্য বাড়িছে ভিখারীর আর্তনাদ!
গগনে ভেদিয়া উঠেছে নিত্যনতুন প্রাসাদ।
সভ্যতা থেমে নেই, কমেনি হত অকিঞ্চন,
এ পোড়ামাটির শহরে কারু নেই যে অঙ্গন।
ব্যস্ত শহর আর ও সভ্যতার চায় ঈক্ষন,
যতই হইল আধুনিক বাড়িছে উৎপীড়ন।
স্বার্থপর যে যার নিজেকে গড়তে ব্যাকুল,
অখল গনে দিন গোনে দিয়ে মাসুল।
সন্ত্রাস দুর্নীতি ছেপে রয়েছে সভ্যতায়,
কত রক্ত প্রয়োজন আর তাদের পিপাসায়?
ভগবানের চোখে আজি অশ্রু টলমল,
চারিপাশে বাজিছে অলক্ষ্মীর মল!
সিন্ধু মিশর হিব্রু এর মত ধ্বংস আনিবে নিশ্চয়ই ,
এত পাপ! এ পৃথিবী আর কেমনে সয়।
এই অমানবিকতায় ভূকম্পন উঠিবে জাগি,
ভূতলে মিলিবে সব, রহিবে মানবতার লাগি
পবিত্র যেটুকু, সেটুকুই পরিপাটি।
হলে হোক না ধ্বংস সব পোড়ামাটি!

সভ্যতা প্রহসন

– কালিদাস রায়

জ্বলছে বিশ্ব আজ আশ্রিতের কাছে,
শান্তির রঙ্গমঞ্চ অশান্তির মাঝে।
ভারসাম্যহীন অনিশ্চিত সভ্যতায়,
মানব অনুষঙ্গে প্রকট অন্তরায়।
সবুজ অটবি ছিল অদ্রি শিখর,
সভ্যতার অপথে করিয়া উজাড়
অহিত আড়ম্বরে, চিত্তে আগড়-
মনুষ্যত্ব হলো আজ অগোচর।
প্রাণ বধের নিত্যনতুন কৌশল
কে কত জমায়ে খঞ্জর
সংকট সৃষ্টির কত উপকরণ,
মানুষ নামের খল আবরণ
রক্তের হোলিখেলা নিজ অধিষ্ঠানে
বন্ধন তুচ্ছ ভাই পরি জনে
হলে হোক সে অশরন।
অশনি সভ্যতায় একি প্রহসন!
অনৃত অভিযোগ কত অছিলায়,
অনাবৃত কাটারি এ সভ্যতায়
পরনিন্দা, উশৃংখল উগ্র তাণ্ডবে
অনিষ্ট নিবাস; শূন্য মন্ডবে
তবু করে শান্তির অন্বেষণ,
কবে হবে শেষ, এ প্রহসন!

ভাই

– কালিদাস রায়

আজ কি গো মা নেই মনে তোর আমার ভাইয়ের মুখ,
আগমনের যার মোদের দুয়ারে দুলে ছিল শুধু সুখ।
গুটি গুটি পায় আঙিনার পরে পড়েছে চরণ ছাপ,
বানিয়ে দে মা ছোট্ট জামা নিয়ে তারি মাপ।
খুশিতে দেখো সারাদিন মুখে কেমনি হাসি বয়,
লুকাস কেন? মনের মাঝে লেগে গেল বুঝি ভয়!
আমারটা করিস ওকে না দিলে বলবে কি মা বল,
সে কি! দু ‘চোখ বেয়ে অমন করে নামছে কেন জল?
বুঝেছি বুঝেছি তবুও তোর আজ নেই কোন ছাড়া;
মনে পড়ে মা , খাবার নিয়ে কেমন বাধিত কাড়া!
আদো আদো বোলে হাসির সহিতে কোহিত কত কথা,
কেমন করিয়া চিবুক ধরিয়া আমায় করিত ভোঁতা।
আজ দেখ মা খাবার কত ভাইয়ের জন্য রাখি,
আর কতদিন খাবো একা দিয়ে তারে ফাঁকি?
বলোনা মা ভাইয়ের গল্প মজা করে শুনি,
দিবে কি মা একটা গেঞ্জি তাহার জন্য বুনি?
কেমন করে আমার মাথার চুল ছিঁড়েছে টেনে,
আজ কি ভাই ধরবে আমায় আগের মত চিনে?
বলোনা মা, আবার আমি ভাইকে পাবো কবে?
আজ তো মোদের নাই যে অভাব, খাবার পাবো সবে।

আগন্তুক

– কালিদাস রায়

সূর্য পশ্চিম দিগন্তে অত্যল্প আলোয়
হয়নি দেখা মন ভরে, মনের উচ্ছৃঙ্খলতায়
বুঝিনি ও অত ঐশ্বর্যী আগন্তুক!
আমি প্রকৃতির সাথে করেছি কৌতুক।
অকস্মাৎ তার অকিঞ্চিৎকর রূপছটা,
আমি হয়ে উঠি বাধাহীন অক্ষটা,
উচ্ছ্বাস ভরা মনে দেখি অনাহুত
আনত বদন, বারেবার খুঁজি সুত
অনুঢ়া হৃদয় অন্বীক্ষা করি বসে,
আয়তীর প্রণয়ী মন কতদূর? অঙ্ক চলে কসে।
আমি আধ জাগ্রত চন্দ্র হয়ে চোখ চেয়ে
আবির গুলাব সাজাতে সর্ব জগন্ময়ে,
বিষ্ময় অপলকে নীরবে আলপনা আঁকি,
কিছু কিছু চোখ কবি করে দেয় সে কি-
হোক পুরুষ কিংবা কোনো নারী।
সে তো তা-ও নয়! ও দেবী নয়তো পরী।
বুঝিলাম সে যে চিরস্পর্শমনি,
অধর তাহার দুলেছিনু একটু দুলোনি-
কথা বলতে সেকি অমৃত সুধা,
যদিওবা মনে জাগে ইপ্সার ক্ষুধা;
বুঝি সে যে বহুদূর, মোর নিষ্ফল আশা।
খোলা আলোকে বাঁকিয়ে বসা
সেও লেগেছিল ভালো, হয়তো অজানা তার
প্রতিনিয়ত সে দেখেই ইত্যাকার।
তার রূপ পূজারী এমন আস্মাদাদী,
পূর্বেই রয়েছে কেহ হৃদয়াসন বাঁদী।
আমিতো নিঃস্ব কাঙ্গাল এক ভীত
কি আছে দিবার শুধু অতীত –
বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে করি জল্পনা।
সোনার পায়েল এর শব্দ মোর আনমনা
কেটে গিয়ে নিঃশ্বাস গলে পড়ে; এর কি বা দাম?
মোর একাকীত্বই তো জীবনের পূর্ণ পরিণাম!


কবি পরিচিতি

কালিদাস রায়। জন্ম জুন ২৪, ১৯৮২ সালে মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামে ।পিতা শিবপদ রায় এবং মাতা সবিতা রায়। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০০ সালে এস এস সি পাসের পর মোংলা সরকারি কলেজ হতে এইচ এস সি ও বি এস এস এবং সরকারি বাংলা কলেজ হতে এম এস এস সম্পূর্ণ করার পর ঢাকা উত্তরাতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে একই গ্রামের মায়া রায় মিতুকে বিবাহ করেছেন – তাদের একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

ছেলেবেলা হতে লেখালেখিতে হাতে খড়ি – গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও পালা নাটক দিয়ে লেখালেখি শুরু। পেশাগত জীবনের ব্যস্ততায় সাময়িক ছেদ পড়লেও এখনও টুকটাক সাহিত্যচর্চার চেষ্টা করে চলেছেন। যান্ত্রিক জীবনের জটিলতা দূরে সরিয়ে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে নিজেদের মানষিক উৎকর্ষ সাধন করুক মানুষেরা এবং সাহিত্যের স্নিগ্ধ প্রশান্তি পৌঁছে যাক গোটা বিশ্বে – এই আন্তরিক ইচ্ছাই তার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা ও জীবনবোধের প্রতিফলন।