পারমিতা ব্যানার্জি- দুর্গা পুজোর কবিতা – অন্য উৎসব

আগমনী বার্তা

– পারমিতা ব্যানার্জি

পশলা বৃষ্টি শেষে
আকাশ হাসল,
বলল, – শরৎ এসেছে।
কত দিন ঘর-বন্দী!
দক্ষিণের জানলাটা
অবাক পৃথিবী!
একে একে ঋতুরা
পেরিয়ে যায়
জানলা বেয়ে…
আকাশের দিকে চেয়ে
শুধু বসে থাকা!
সাদা মেঘের ভেলা
মনে করালো,
শরৎ এসে গেছে॥
হবে হয়ত!
শিউলি দেখিনি এবছর।
চোখ বুজে
ঘ্রাণ নেবার চেষ্টা করি!
কোথাও কোথাও কী
কাশ ফুটেছে?
হয়তো বা…
সকালের সোনা রোদ
বলল – মা আসছে॥

বোধন-১

– পারমিতা ব্যানার্জি

জীবনী শক্তির প্রতীক
একশো আট নীলপদ্মে
সজ্জিত পুষ্পপাত্র ;
একশো আট প্রজ্বলিত
প্রদীপও প্রস্তুত!!
মমতাহীন প্রচণ্ড চামুণ্ডা
জাগবে সন্ধিক্ষণে;
ঘোচাবে যত অন্ধকার
অনুঘটক অবধূত!
উৎসবটাই সেরার সেরা!
প্রশ্ন জাগে মনে —
যারা পদ্ম চয়ন করে
জলাশয় সেঁচে ;
কুমোর যারা প্রদীপ গড়ে,
মাটির তাল ঘেঁটে —
তারাও কি নয় অনুঘটক
ঐ সন্ধিক্ষণে?
তাদের ঘরে জ্বলে না কেন
আলো!!!
কোন্ বোধনে ঘুচবে তাদের
কালো!!!

বোধন-২

– পারমিতা ব্যানার্জি

আজ কিসের বোধন?
দেখেছি যে আজ
হেরে যাওয়া নারী শক্তি!
এ কোন স্বার্থে
দেখি ভ্রুণ-দুর্গা হত্যা!!
বিকৃত মন ধর্ষণ করে
ফুলের মত নিষ্পাপ শিশু-দুর্গা!
কেন? কেন?
বৃদ্ধাশ্রমে বসে কাঁদে
অবহেলিত অসহায় মা দুর্গা!
পরাজিত নারী শক্তি!!!
দুর্গতিনাশিনী কোথায় তুমি?
তৃতীয় নয়ন তথা ইন্দ্রিয়
কি আজ অন্ধ!
তুমি সত্যিই কি করতে পারো
অসুর নিধন?
সন্দেহ হয়….

বিসর্জন

– পারমিতা ব্যানার্জি

প্লাটফর্মে —
একাদশীর ভোরে
উচ্ছিষ্ট হয়ে পড়ে আছে মেয়ে।
সস্তা পাউডার মুছে
ঠোঁটে গালে ক্ষতের মানচিত্র।
বুড়ো বাপ খুঁজছে
শক্ত মুঠোয় ধরা ক’টা টাকা!
দশমীতে রাতভর,
সোমত্ত মেয়ে কোথায় ছিলো,
খোঁজ রাখেনি বাপ!
দুর্গা হারায়, আবার জন্মায়!
প্রভাত সূর্য
নাগাল পায় না জলের স্বর্গের!
আগুন জ্বালে শুকনো চোখে!

অন্য উৎসব

– পারমিতা ব্যানার্জি

সদ্য শেষ হওয়া
এ উৎসবের পরেও থাকে
আরও উৎসব।
রং হীন জীবনের উৎসব।
ঝড়ে প্লাবনে হেরে যাওয়া
মানুষের উৎসব!
হেমন্তের পাকা ধানের
গন্ধ না পাওয়া
কৃষকের উৎসব….
আত্মহত্যার উৎসব।
বন্ধ কারখানার সামনে
প্রতিবাদী মিছিলের উৎসব;
স্বপ্নের উৎসব!!!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।