লাল গোলাপ
একটা লাল গোলাপ দাও না আমাকে।
ওকে আঁকড়ে রাখবো বুকের গভীরে,
বারুদ গন্ধ কি গোলাপের থেকেও মিষ্টি,
যাবার সময় সেটাই কি মনে হয়েছিল?
কী এত যন্ত্রণা বা অতৃপ্তি ছিলো ঐ বুকে?
কি জন্য অকুল পাথারে ভাসালে আমায়?
একবার ভাবলে না উচ্ছলিত মেয়েটাকে!
যে তোমায় প্রাণভরা ভালবাসা দিয়েছিল।
জানিনা কোথায় আছ ফ্রান্সে না বাংলায়!
সে নিয়ে প্রশ্ন নেই, কাকেই বা প্রশ্ন করবো?
আজ তুমি যে সব ঠিকানার বাইরে রয়েছ,
ভাল থেকো, ভালবাসা ছিলো বলে বল্লাম।
ভুল করে ভালবাসা ছলে আজ আমি মৃত।
আমার লজ্জা,তোমার নিন্দা, পাথর আমি!
শুধু যে নবাগত বাড়ছে এ দেহ বল্লরীতে
তাকে দেব বলে, কী রাখি? ভাবছি এখন।
আমাকে তুমি কিছু দেবে! অলীক চিন্তা।
বাগিচা! লাল গোলাপটা দাও না আমাকে,
লাশে রাখবো নয় দেব নবাগতেকে
রক্ত নিশান বলে । হায় রে ভালবাসা !!!
ভালোবাসি, হ্যাঁ, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
মনছবি
ভরা পূর্ণিমাতে দাউদাউ বরফ জ্বলছিলো,
সে কি শুধুই দেখবার জন্য,
না কি একাধিক মনের টানাপোড়েনে
জানি না।
আরও অনেকবার ঘোর অমাবস্যায়
জ্বলেছে বরফ,
বরফ গলেনি তবু।
চোরাস্রোতে কালের স্রোত থমকায় না।
সামনে শিশু
পিঠে বোঝা মা,
কিছু না বুঝে পাতা ভরে যায়।
ওদের চোখে বোঝা মানে বোঝা।
ওদের দেখার জন্য দূর দূরান্তের থেকে
পর্যটক আসে,
ছবি তোলে,
মনের ছবি কখনোই ওঠে না।
আমি তাই আরোও একবার
চোরাস্রোতের ছবি তুলবো বলে
অপেক্ষায়।
পাথর প্রতিমা
কোণে বসে আছে –
তবু কানায় কানায় ভরা!
দিগন্ত বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ শেষ।
এখন দৃষ্টি নিরাকার,
দীপ্তি নেই, নেই হতাশাও,
তার সামনে এখন শুধু তুমি।
তার কাঙ্খিত তুমি,
তার বিস্মৃত তুমি,
তার চিরসখা তুমি,
তার কালঘুমের তুমি,
একসাথে একই দৃশ্যপটে-
শুয়ে আছ একই কোণায়।
কোণে বসে আছে-
শুধু কানায় কানায় ভরা,
নেই একবিন্দুও নির্ঝর!
সবটা জল বরফ এখন,
পড়ে থাকা নিষ্প্রান –
দেহটাও শীতল যেমন।
এক সময় এক বৃদ্ধা আসে,
বোঝে তার বরফ শীতলতা!
শেষ খুঁজে পায় না,
অন্তিম পরিনতি ভাবতে পারেনা,
তবে কি আদর্শ সৈনিক আজও-
ভোলেনি প্রিয়ারে?
যাত্রা পথ দোঁহে মিলে করিবে উজ্জ্বল?
তা কীভাবে হয়?
এখন নবজাতক পাথরের কোলে,
অবিশ্রান্ত ধারা বর্ষণ।
কবির কথা – Lord Tennyson এর লেখা Home they brought her warrior dead কবিতার ছায়া অবলম্বনে উপরের কবিতাটি রচনা।
টলোমলো
বলা সহজ
না, না বলা!
চলা কঠিন
না, না চলা।
দেখা সবুজ
না, না দেখা!
রাখা গভীর
না, না রাখা।
বোঝা জটিল
না, না বোঝা!
খোঁজা সত্য
না, না খোঁজা।
রুদ্র ..সৌম্য ..রুদ্র..
যুদ্ধ ..শান্তি ..যুদ্ধ ..।
জলের স্বর্গ
ভোরে মাটির ভিজে গন্ধে
মন পুকুরে,
ময়নামতি সাথীর সাথে
ডুব সাঁতারে।
তুলসীতলে শাঁখ বাজিয়ে
পাঁচালী সুর,
জঠর জ্বালা ভাত নজরে
আজ সে দূর।
দুমুঠো খেয়ে ঘুমোতে হবে
সেটাও কাজ,
শুকনো মুখে দাঁড়ানো মানে
বৃথাই সাজ।
দুধের শিশু ঘুমিয়ে পাশে
এখন সে মা,
বিরাম শেষে পাশ কামরা
কেউ কারো না।
আঁধার নামে মাটির ঘরে
পিদিম জ্বলে,
বুকের খরা কাটাতে মুখে
চোখ কাজলে।
পতঙ্গেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে
নেশার ঘোরে,
পাশ কুটিরে কোলের শিশু
ঘুমিয়ে পড়ে।
পেঁচার ডাকে সময় কাটে
থামে না বলে!
না মন, মনে সারা রাত্তির
ঝগড়া চলে।
বিষ ঢেলে সে একটু থেকে
পগার পার,
ময়নামতি জলের স্বর্গে
চমৎকার।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।