শামীম হাচান – কবিতাগুচ্ছ – ২

পরিচয়ের দাবি

– শামীম হাচান

আমিও প্রাণ খুলে হাসতে চাই
বাঁচতে চাই সবার মত
চাই এ পৃথিবীতে আমার অধিকার।

কেন নেই এ পৃথিবীতে আমার কোন পরিচয়?
জন্মের পর থেকে মাকে পাইনি,
পাইনি মায়ের আদর অথবা বাবার স্নেহ
মায়ের কোলের পরিবর্তে পেয়েছি ডাষ্টবিন ৷

কি দোষ ছিল বলো আমার?
বাবা-মায়ের এক মুহুর্তের আনন্দে অবাঞ্ছিত
আজ আমি মাতৃ-পিতৃ পরিচয়হীন৷
অসুস্থ এ সমাজও আমাকে নেয়নি আপন করে
অনাহারে দিন কাটে পথে পথে
দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় সবাই
আমার দিকে সকলে তাকায় আড়চোখে।

ওগো মাতা ও পিতা, কোথায় তোমাদের সেই ভালবাসা?
তোমরাইতো এনেছো এ ধরায়
তবে কেন পরিচয় দিতে এত বাধা?
অমি কি কখনো পাব না জানতে
কি আমার আসল পরিচয়?
তুমিও কি পারো না মা একটু আদর দিতে,
ছোট্ট সোনা বলে বুকে টেনে চুমু খেতে?

কে দেবে আমার এ অধিকার?
মাগো, ও বাবা, আমি বাঁচতে চাই
তোমাদের পরিচয় নিয়ে –
বাঁচতে চাই সবার মত
চাই এ পৃথিবীতে আমার অধিকার।

কে নেয় ওদের খবর

– শামীম হাচান

ঈদ মানেই আনন্দ, উল্লাস, খুশি
কঁচি কাচার মুখে ফোটা অনাবিল হাসি।

কিন্তু সবাই কি পারে এই আনন্দের অংশিদার হতে?
পারে কি সব কঁচি কাঁচা ঈদের এই আনন্দের ভাগিদার হতে?
যাদের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটে না
অনাহারে কাটে কত দিন রাত
পরণে জীর্ণশীর্ণ ছেড়া কাপড়
অভাব যাদের নিত্য সঙ্গী
দূর থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস আর চোখের জল ফ্যালে,
তাদের কি স্পর্শ করে ঈদের খুশি,
কোর্মা, পোলাউ এর স্বাদ?

যাদের দিনরাত কাটে পথে পথে নেই কোন বাসস্থান
নেই রাত্রি যাপন করার মত কোন ব্যবস্থা
রাতের কালো অন্ধকার এলেই দেখা যায় নীরবতা ,
পথের ধারে, বাসস্ট্যান্ড, রেল লাইন, ল্যাম্প পোষ্ট, টার্মিনাল যাদের বাসস্থান
মাথার তলায় থাকে নরম বালিশ এর বদলে ইট, পাথর, জুতা!
কে নেয় ওদের খবর?
কেউ আছে কি মুছাবে ওদের চোখের জল
ভালবাসার আঁচলে জড়িয়ে নিবে,
নিজ সন্তানের মত জড়িয়ে নিবে আপন বুকে?

ওদের জন্য আজ ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দাও,
ঈদের খুশিকে ভাগাভাগি করে নাও,
তবেই পাবে ঈদের প্রকৃত আনন্দের তৃপ্তি৷৷


কবি পরিচিতি

শামীম হাচান। ফেব্রুয়ারি ২৮, ১৯৮৭ সালে মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া গ্রামে জন্ম। গ্রামের বাড়ি বলতে দাদা বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম জেলার সন্দীপ থানার মুছাপুর গ্রামে৷ জন্ম সুত্রে সে মোংলা থানার উত্তর চাঁদপাই গ্রামে বাবা মোঃ আব্দুল্লাহ্ শেখ, মাতা মোছাঃ হাজেরা বেগম ও দুই ভাই সহ মোট তিন ভাই এবং এক বোনের সমন্নয়ে একত্রে বসবাস করে আসছে ৷

পরিবারের বড় সন্তান হওয়ার কারণে খুব আদরের ছিল, যার কারণে লেখা পড়ায় বেশ মনোযোগী হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে স্কুলে যাওয়া হয়নি ৷ শিক্ষা জীবনে প্রথম পদার্পন ১৯৯৫ সালে শিশু শ্রেনীতে মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে, ২০০০ সালে সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ২০০১ সালে চাঁদপাই মেছেরশাহ্ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৬ সালে এস এস সি এবং ২০০৮ সালে মোংলা টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে এইস এস সি পাস করার পরে শিক্ষা জীবনের ইতি৷

স্কুল জীবন থেকেই লেখলেখির উপর খুব আগ্রহ৷ জীবিকার তাগিদে নানা ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর বর্তমানে ব্যাবসায় জড়িত ৷ তবুও নানা ব্যস্ততার মধ্যেও লেখালেখি থেমে নেই ৷ ইতি মধ্যে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি ঝৌথ কাব্য গ্রন্থে। এছাড়া বেশ কিছু ছোট গল্প, ছড়া, কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন ম্যাগাজিন, জাতীয় দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে তার লেখালেখি ৷ সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী যেন আগামিতে আরো উন্নত লেখা পাঠকদের উপহার দিতে পারেন তিনি।