আমার ছোটবেলা ও স্কুল-জীবন – ১২
– দীপক রায়
শ্রী হরিপদ মন্ডল। তিনি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। নবম শ্রণীতে তিনি আমাদের পদার্থবিদ্যা ও নৈর্বাচনিক গণিত পড়াতেন। তাঁর পড়ানোর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিলো চোখে পড়ার মতো অনানুষ্ঠানিকতা। ব্যক্তি হরিপদ বাবু সব সময় ছাত্রদের খোঁজ খবর রাখতেন। বিশেষ করে ছাত্রদের সঙ্গে স্কুলের বাইরে তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ আহ্বান আমার খুব ভালো লাগতো। বিশেষ করে মনে পড়ে স্কুলের পঞ্চাশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তাঁর উষ্ণ আতিথেয়তার কথা। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো তিনি সেন্ট পলস্ হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্ম জীবন থেকে অবসর নিয়েছিলেন। আর মাত্র কিছুকাল আগে স্বাস্থ্যগত কিছু জটিলতার কারণে হঠাৎ করে তিনি আমাদের সকলের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গোছেন। তাঁর এই হঠাৎ চলে যাওয়ায় তাঁর ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মীরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছে। আমি তাঁর পরলোকগত জীবনের চিরশান্তি কামনা করি!

আমাদের সময়ে সেন্ট পলস হাই স্কুলের পুরুষ শিক্ষকদের মধ্যে শ্রী মোহিত কুমার নাথ সম্ভবত: কনিষ্ঠতম শিক্ষক ছিলেন। সর্বদা নিষ্পাপ হাসি মুখের এই সুদর্শন শিক্ষক আমাদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। আমরা তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। তিনি আমাদের বিজ্ঞান পড়াতেন। ব্যক্তিগত ভাবে ওনাকে আমার মনে হতো ভীষণ ছেলেমানুষ। তবে আমাদের মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও আমাদের প্রতি কখনও কঠোর হতেন না। সুমিষ্ট স্বরে তিনি ধৈর্য্যশীল হয়ে আমাদের শিখাতেন। একবার তিনি গাছের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে শিখাচ্ছিলেন। তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন না। তিনি গাছের যে ছবিটি বোর্ডে এঁকেছিলেন তা দেখতে অনেকটা লম্বা কাঁঠের বস্তুর মতো দেখাচ্ছিলো। একজন দুষ্টু ছেলে প্রশ্ন তুলেছিলো এই বলে যে সেটা কোনো ভাবেই দেখতে একটা বৃক্ষের মতো ছিলো না। তাতে কান্ড, ডাল, পাতা, ফুল ফলের মতো কোনো অংশই দৃশ্যমান ছিলো না। স্যার বললেন: “ছবি যাই হোক পাশে লেখা আছে।” স্যারের অন্য একটা গুণ ছিলো তা আমাদের আকৃষ্ট করতো। তিনি আমাদের দুষ্টুমির কথা অফিসে জানাতেন না। তিনি আমাদের সাথে বন্ধুর মতো ছিলেন। মাঝে মাঝে কঠোর হতে না পেরে নিজেই হেসে ফেলতেন। তাতে আমরা অনেক আনন্দ পেতাম। সেই ৭২/৭৩ সালের পর আর স্যারকে দেখি নি। তাঁর ভাইঝি বন্ধু মীরার কাছ থেকে ওনার খবর রাখার চেষ্টা করি।
আমরা ১৯৭৭ সালের বিজ্ঞান বিভাগের এস, এস, সি, পরীক্ষার্থীছিলাম। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আমাদের ১৭ জনকে নির্বাচিত করা হয়। আমাদের স্কুল বাগেরহাট সেন্টার পছন্দ করতো বরাবর। কারণ শোনা যেতো রামপাল সেন্টারে নকল হয়। দক্ষিণ বাংলার শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপিঠ সেন্ট পলস্ হাই স্কুল এই বদনামের ভাগীদার হবে কেনো? আমি কয়েকজন সহপাঠী বন্ধুর সাথে পরীক্ষার কয়েকদিন আগে ভোর ৪টার লঞ্চে বাগেরহাট রওনা হই। আমাদের অধিকাংশ ছাত্র পিসি কলেজের হোস্টেলে জায়গা করে নেয়। মেয়েরা সরকারী গার্লস স্কুলের হোস্টেলে থাকে। বাকীরা তাদের সুবিধা মত জায়গা নিয়ে থাকে।
প্রাক্টিক্যাল সহ পরীক্ষার জন্য একমাস আমাদের বাগেরহাটে থাকতে হয়। আমরা অনেকটা নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা পালন করে পরীক্ষার দিন গুলি কাটাই। মাঝখানে অমর পিটার স্যার ও হরিপদ বাবু আলাদা ভাবে কয়েক দিন আমাদের সাথে দেখা করে আসেন; তবে প্রাক্টিক্যালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা শিক্ষক-অভিভাবক ছাড়া ছিলাম অনেকটা অসহায়। উদাহারণ হিসাবে বলা যায় পদার্থবিদ্যার পরীক্ষার দিন আমার পড়ে পানির তুলনায় ভারী বস্তুর আপেক্ষিক গুরুত্ব নির্ণয় করা। এ সব পরীক্ষা আমরা স্কুল ল্যাবে এতো ভালো চর্চা করেছিলাম যে পরীক্ষার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় সঠিক ফলাফলে। সমস্যা করলো ওখানকার এক পরশ্রীকাতর পদার্থবিদ্যার অপদার্থ শিক্ষক। সে আমার খাতা দেখেই মন্তব্য করলো তুমি মুখস্থ করে এসেছো। আমি তার মুখের উপর সাথে সাথে বললাম, না, আমি তা করিনি। শহরের এই শকুনধর্মী শিক্ষকটির কথা আমি বা আমরা জানতাম না। আমরা গন্ডগ্রামের সভ্য আর সততায় পূ্র্ণ সেন্ট পলস স্কুলের নিষ্পাপ শিক্ষার্থী। পাশ থেকে কেউ একজন বলল, এভাবে বলেছো, নম্বর দেবে না। ফল বেরোলে দেখলাম তাই। থিওরিটিক্যালে ৭৫ এ ৫৮ পেয়েও লেটার মার্কস পেলাম না। ঐ শিক্ষক নামের অশিক্ষিত লোকটি আমাকে ২৫ এ মাত্র ১৩ দিয়েছিলো। আমার বিশ্বাস স্কুল থেকে সে সময় আমাদের কোন শিক্ষক সাথে থাকলে এমন বিমাতা সুলভ আচরণ তারা করতে পারত না।
তবে পরীক্ষার প্রথম দিন বাগেরহাট সরকারী স্কুলে (জেলখানার পাশে) নুরল আমীন সরকারী স্কুলের ছাত্রদের সাথে আমাদের সীট পড়ে। ওদের রোল নম্বর দিয়েই ছিলো শুরু, এর পরই ছিলো সেন্ট পলস স্কুলের রোল নম্বর। ওরা সেন্ট পলস ঠিক মতো বলতে পারছিলো না। অনেক সম্মান পেয়েছিলাম গার্ড দেওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে। ওনারা আমাদের ডিসিপ্লিনড আর চুপচাপ দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন। হলে ঢুকে সীট খুঁজে পেয়ে দেখলাম, আমার বেঞ্চে মিষ্টি চেহারার অপেক্ষাকৃত কম বয়েসী একটি ছেলে বসে আছে। পাশে হেলমেট হাতে এক ভদ্রলোক। আমার সাথে পরিচিত হলেন, আর তাঁর ছেলে ফরিদকেও পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি অবাক হলাম এতো কম বয়েসে সে এস এস সি পরীক্ষার্থী। বাবা যাওয়ার সময় হাসি মুখে একটা ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন যেন পরস্পরকে সাহায্য করি। উনি যাওয়ার পরই সুদর্শন ফরিদ একমুঠো নাবিস্কোর দামী ক্যান্ডি আমার সামনে বেঞ্চে রেখে একটা হাসি দিলো। বললো এতে গ্লুকোজ আছে আর পড়া মনে আসতে সাহায্য করে। সে দিন থেকে ফরিদের সাথে আমার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। পরবর্তী সময়ে আমরা চিঠি আদান প্রদান করেছিলাম। আমি বি এল কলেজে ভর্তি হই আর সে পি সি কলেজে। পি সি কলেজ তখন সরকারী নয়, অন্যদিকে আমি সরকারী বি এল কলেজে পড়ি। এ ব্যাপারটায় সে আমাকে সম্মানের চোখে দেখতো। ওর বাড়ী ছিলো বাগেরহাট শহরের মুনিগঞ্জে।
বাগেরহাট শহরে পরীক্ষা দিয়ে এক মাস পরে গ্রামে ফিরলাম। জীবনে প্রথমবার বড় হয়ে পরিবার ছাড়া শহরে থাকা। বাড়ি এসে শার্ট আর পায়জামা পরেই ঘোরাঘুরি করছি। কেমন শহুরে শহুরে ভাব, যেন কিছু দিনের জন্য গ্রামে আসা। মনে হলো বড় হয়ে গেছি। জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা শেষ করে এসেছি। বিরাট ব্যাপার!
হঠাৎ মনে হলো কাজকর্ম খোঁজা দরকার। আর কতো দিন বসে থাকা! রেজাল্ট বের হতে তিন মাস লাগবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। একদিন সকালে স্কুলে গিয়ে হাজির। উদ্দেশ্য তখনকার প্রধান শিক্ষক ফা: কার্লো রুবিনির সাথে দেখা করে মনের কথাটা বলা। গেলাম হোস্টেলের পাশে তাঁর ঘরে। সব শুনে তিনি আমাকে বললেন, “টুমি কী কাজ করটে পারে?” উনি সব সময় গম্ভীর থাকতেন, কথা কম বলতেন। তবে আমাকে চিনতেন। আমি বললাম, ফাদার আমি ইংরেজী টাইপ করতে পারি। উল্লেখ্য নবম দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তখনকার প্রধান শিক্ষক ফা: দমেনিকো সিগনোরিনীর উদ্যোগে আমরা ক’জন টাইপ শিখেছিলাম মহা আনন্দে। আমাদের জন্য স্কটিশ শিক্ষিকা রাখা হয়েছিলো ঢাকার কনসার্ণ অফিস থেকে। তাঁর নাম ছিলো এ্যাঞ্জেলা ক্লান্সী। আমার স্পীডও ভালো ছিলো। তিনি আমাদের একটা কাগজের কী বোর্ড দিয়েছিলেন বাড়িতে প্রাক্টিসের জন্য। সেটি এখনও আমার ব্যক্তিগত ফাইলে আছে স্মৃতি হিসাবে। যাহোক, ফাদার কার্লো বললেন, “নীরোদ বাবুর কাচে যাও, আর দেকো কোন কাজ থাকবে কিনা।” আমি অফিসে এসে স্যারকে বললাম। স্যার আমাকে চকচকে নতুন একটা টাইপ রাইটারের সামনে বসিয়ে দিলেন, আর ওই বছর জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার্থীদের নামের একটা তালিকা আমাকে ধরিয়ে দিলেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে সবার নাম সহ অন্যান্য তথ্য একটা কাগজে টাইপ করতে বললেন। আমি মহা আনন্দে দুপুরের পর পর্যন্ত সেটি শেষ করে জীবনের প্রথম বার অফিসে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কাজ করার সময় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে অফিসে বসে কাজ টাইপ করতে দেখেছিলো। হয়তো ভেবেছিলো এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে এসেই স্কুলে চাকরি পেয়েছি। তাতেও খানিকটা গর্ব বোধ করেছিলাম। তবে মনে পড়ে এর পর নীরোদ বাবু আমাকে আর যেতে বলেন নি, আমিও যাই নি। উনি বলেছিলেন দরকার হলে খবর দেবেন।
এর পর এক ছন্নছাড়া জীবনের প্রথম এডভেঞ্চার! বাড়িতে বসে থেকে থেকে মনের মধ্যে এক রকম অস্থিরতা কাজ করছিলো। তা ছিলো কাজের সন্ধান পাবার অস্থিরতা। এখন বুঝতে পারি সেটা ছিলো সেই কিশোর বয়েসেই অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার এক মনস্তাত্বিক বহি:প্রকাশ। একদিন এক পরিচিক কিশোর ছেলের সাথে বেরিয়ে পড়লাম খুলনার উদ্দেশ্যে সকাল ১০টার লঞ্চে। পাঁচ ঘন্টা পর খুলনার বড় বাজার ঘাটে। সেখান থেকে বিকালের লঞ্চে সরাফ পুর।
এক দোতলা বিল্ডিং এর দুই তলায় বারান্দায় এক রুমে আমার থাকার জায়গা হলো। দুই ভাইয়ের ছোট ভাই অবস্থাপন্ন, রেশন ডিলার ছাড়াও তাঁর বিভিন্ন ব্যাবসা ছিলো। তিন বেলা খাওয়া, সকাল সন্ধ্যায় তিন জন ছেলে-মেয়েকে পড়ানো আর পায়জামা-শার্ট পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা, নিমন্ত্রণ রক্ষা আর বেড়ানো। সামান্য মাসোহারা। ও বাড়িতে আর একজন বয়েসে বড় গৃহশিক্ষক ছিলো। আমাকে সবাই বেশ পছন্দ করতো, আর ছোট মাস্টার মশায় বলে ডাকতো। এভাবে চলতে চলতে খবর শুনলাম দুই এক দিনের মধ্যেই রেজাল্ট বের হবে। দারুণ এক উত্তেজনা বোধ করলাম মনের মধ্যে। এক সকালে স্নান সেরে ছোট হাত ব্যাগটা নিয়ে রওনা হলাম বাড়ির দিকে। সাথে বেতনের সামান্য টাকা আর এক কেজি চিনি। আহা! তখন গ্রামে চিনি খাওয়া এক রকম বিলাসিতা ছিলো। আমাকে আর কে পায়!! সন্ধ্যার মধ্যে চালনা বাজার হয়ে লঞ্চে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। তখন বর্ষা কাল। বাড়ি এসে অনেক যত্ন পেলাম সবার কাছে, বিশেষ করে মায়ের। সেই চিনি আর বাড়ির নারকেল দিয়ে নাড়ু তৈরি হলো। আমার ছোট দুই বোন মনীষা ও নীহারিকা সেন্ট পলসের ছাত্রী। একদিন মনীষা দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি এসে আমাদের রেজাল্টের খবর দিলো। আমি তখন উঠানের এক পাশে কোদাল দিয়ে ড্রেন কেটে জল সরানোর ব্যবস্থা করছিলাম। ও বললো যে আমাদের সবাই পাশ করেছি। বিজ্ঞান বিভাগে ১৭ জনের মধ্যে আমরা ৬ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছি। যেখানে বোর্ডে পাশের হার ৪৬% (যত দূর মনে পড়ে); আমাদের স্কুলের হার ১০০%! সঙ্গে সঙ্গে জামা- পায়জামা পরে ছাতা নিয়ে কাদা পথে দুই মাইল হেঁটে চলে আসলাম স্কুলে। মনে আছে শিক্ষকদের কেউই তেমন ভাবে বাহাবা দিলেন না। হয় তো প্রতি বছরই এমন হয়, আগের বছর স্ট্যান্ড পর্যন্ত ছিলো। জানলাম খবর শুধু ওই টুকু। নম্বর পেতে দু’এক দিন বা আরো বেশী দেরি হবে। তখন বোর্ডে ট্র্যাংকল করে জানতে হতো। দু’একজন শিক্ষক সে কাজেই হয়তো ব্যস্ত ছিলেন। কয়েক জন সহপাঠীর সাথে দেখা হলো। কিছু আলাপ আর গল্প করে বাড়ি ফিরে আসলাম। তখনকার দিনে কীসের মিষ্টি, কীসের ভালো খাবার? সব নিত্য দিনের মতই। এর পর কলেজে ভর্তি হওয়া, কোথায়, কীভাবে — এসব কিছুই মাথায় আসে নি তখন।
একদিন আমার সহপাঠী বন্ধু বেণী মাধব, বিধান ও লুকাসের সাথে উঠে পড়লাম মোংলা বন্দরের ১০ নম্বর লঞ্চঘাট থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়া: না অর্থনৈতিক, না ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের। দৌলতপুর গিয়ে কোথায় থাকি, কোথায় কী করি! এ বিষয়গুলো আজ অনেকটা লেখারও অযোগ্য। বি. এল. কলেজে এক বছর আগে ভর্তি হওয়া সেন্ট পলস স্কুলের আমাদের বড় ভাইদের পরামর্শ আজ বিশেষ ভাবে স্মরণ করছি। বিশেষ করে শিশিরদার কথা, যিনি একজন ডাক্তার হিসাবে সরকারী কর্ম সম্পাদন করে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন।। আমার কৃতজ্ঞতার বোধকে প্রসারিত করি বন্ধু বেণী মাধবের প্রতি, যে আমাকে কয়েকটা দিন তার কাছেই অনেকটা আগলিয়ে রেখেছিলো। সাথে ছিলো ভ্রাতৃসম সহপাঠী বন্ধু লুকাস ও বিধান।
এক দিন বি, এল, কলেজে ভর্তি হয়ে বাক্স পেটরা, বিছানা নিয়ে রওনা হয়ে যাই। যাওয়ার পথে সকাল বেলা শাখারী পুকুর পাড়ের বট গাছের নিচে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অশোক বাবুর সাথে দেখা। মাথায় আমার ট্রাঙ্ক। কয়েক সেকেন্ডে দাঁড়িয়ে আমাকে তাঁর উপদেশগুলো দিয়ে দিলেন। বাড়ী থেকে দু’ মাইল মাথায় বোঝা নিয়ে সেদিন ১০টার লঞ্চে গিয়ে উঠি।
আমার ছোট বেলা ও স্কুল জীবন পিছনে ফেলে নতুন স্বপ্নে এবার শুরু হবে নতুনভাবে আমার জীবনের পথ চলা (সমাপ্ত)
লেখক পরিচিতি

দীপক রায় – পূর্ণ নাম: দীপক কুমার রায়। জন্ম এস এস সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৭ই জানুয়ারী, ১৯৬৩। বৃহত্তর খুলনার অন্তর্গত বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় মালগাজী গ্রামে। বাবা স্বর্গীয় শ্রী ধনঞ্জয় রায় এবং মা শ্রীমতি অমলা রায়। মোংলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় ও খুলনার দৌলপুরে সরকারী ব্রজলাল কলেজ থেকে যথাক্রমে এস এস সি এবং এইচ এস সি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
চাকরি জীবন শুরু ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর, ঢাকায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের জন্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার একটা স্কুলে সিনিয়র ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার হিসাবে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ওই চাকরি থেকে ইস্তাফা দিয়ে বর্তমান পর্যন্ত স্বনিযুক্ত প্রশিক্ষক হিসাবে বিদেশী শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা ভাষার শিক্ষাদানের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। এক ছেলেও এক মেয়ের বাবা। ছেলে সুদীপ্ত রায় ঢাকার একটি বৃহত্তর বেসরকারী হাসপাতালে রেজিস্ট্রার ডাক্তার হিসাবে কর্মরত। মেয়ে শর্মিষ্ঠা রায় পরিবেশ বিজ্ঞানে সম্মান সহ সম্প্রতি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দিয়েছে।
বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিতে গভীর ব্যুৎপত্তি ও অনুরাগসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী দীপক রায়। তাই কাজের ফাঁকে নিজের সন্তুষ্টির জন্য লেখা-লেখি নিয়ে সময় পার করেন। ফেসবুকে জীবন ও বাস্তবতা নিয়ে কবিতা লিখে থাকেন প্রতিদিনই, নিয়মিত। গান শোনা তাঁর অন্যতম প্রধান শখ। বিশেষতঃ রাগ প্রধান গান – এ উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ব্যপক আগ্রহ। যখনই অবসর পান গান শুনে সময় কাটানোই তার নিয়মিত অভ্যাস।