আমাদের গ্রাম
– নরেশ চন্দ্র হালদার
আমাদের গ্রামখানি সবুজ শ্যামল,
চারিদিকে যেন শুধু আনন্দের হিল্লোল।
সকালে সোনালী সূর্য উঠে পূর্বদিকে,
গ্রামখানি ঝলমল করে থেকে থেকে।
পাখির নীড়েতে বাস করে কত পাখি,
সকাল থেকেই তারা করে ডাকাডাকি।
তাহাদের কোলাহল করে পুলকিত,
অপূর্ব আনন্দে করে দেহ রোমঞ্চিত।
কোকিলের কন্ঠস্বর অতি সুমধুর,
সকলের মনে জাগায় অপূর্ব গানের সুর।
গ্রামের কৃষাণী বধূ চলে ধীরে ধীরে,
জল আনিবার তরে দীঘির তীরে।
কত না মধুর লাগে সে মুখের ভাষা,
সকলের মনে জাগায় ছোট বড় আশা।
ধন্য আমি, ধন্য আমার জীবন ধারণ,
এই গ্রামে বাস করি এই যে কারণ।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি
– নরেশ চন্দ্র হালদার
সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলাদেশ,
নয়নাভিরাম দৃশ্যের হেথা নেই যে কোন শেষ।
নদী-নালা, খাল-বিল, তরুলতার মাঝে,
কত যে সৌন্দর্যের ছবি দেখা যায় সকাল সাঝে।
এই দেশেরই বিহঙ্গকূলের কন্ঠস্বর শুধু শুনি,
মুগ্ধ হয়েছে ভাবুক-সাধক আছে যত জ্ঞানী-গুণী।
চৈত্র মাসের চৈতালী হাওয়া লেগেছে যার গায়,
সেইতো এদেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেনিকো কভু হায়।
হেমন্ত ঋতুর সোনালী ধান একবার চোখে দেখি,
বলেছে সে ধান, জুড়ালো গো প্রাণ নেই তো কোথাও বাকি।
আজি এই দেশে হেরিলাম যাহা ভুলিতে নাহি পারি,
ধন্য হবে জীবন আমার যদি এই দেশে আমি মরি।
সৌন্দর্যের দেশ নেই তো এর শেষ অপরূপ লীলাভুমি,
ধন্য হয়েছে সবাই হেথায় ধন্য হয়েছো তুমি।
ষড় ঋতুর বৈচিত্র
– নরেশ চন্দ্র হালদার
আষাঢ় মাসে বৃষ্টি আসে
চৈত্রে আসে ঘুম,
পৌষ মাসে পিঠে খাওয়ার
পড়ে যায় ধুম।
ফাল্গুন মাসে দক্ষিণ হাওয়া
মনে লাগায় দোলা,
ভাদ্র মাসে বাড়ি বাড়ি
তাল পড়ে মেলা।
কার্তিক মাসে অভাব এসে
বাড়ি ঘিরে ধরে,
শ্রাবণ মাসে অঝোর ধারায়
বৃষ্টি শুধুই পড়ে।
জৈষ্ঠ মাসে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার
বিয়ে কোথাও নাই,
মাঘ মাসে শীতের তরে
তুলার লেপ চাই।
আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি
পূজার হয় মেলা,
অগ্রহায়ণ মাসে সোনার ধানে
ভরে প্রতি গোলা।
বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী
আসে থেকে থেকে,
এর সাথে ফলের রাজা
আজ ওঠে পেকে।
এক মসুমের খতিয়ান
– নরেশ চন্দ্র হালদার
বোশেখ মাসে চাষ শুরু
পৌষ মাসে শেষ,
মাঝে কাটে ব্যস্ত সময়
করবো আমি পেশ।
চাষের পর অবসর
চলবে কিছুকাল,
সারা ক্ষেতে সবুজ ধান
গোয়ালে গরুর পাল।
কুটো খেয়ে গরুর কাটে
গোয়ালে জীবন,
বাইরে যাওয়ার জো নেই
গোণে দিনক্ষণ।
অবশেষে কার্তিক মাসে
মাঠে পাকে ধান,
গরুগুলো জীবন পায়
দুঃখের অবসান।
ধান কাটা শেষ হলে
উঠানে হবে পালা,
বৃষ্টি বাদল দেখা দিলে
বাড়বে এক জ্বালা।
যন্ত্র ছাড়াই ধান মাড়াই
হবে এবার শুরু,
কাস্তে, কান্দোল, লোকজন
সাথে থাকবে গরু।
মলা-ডলা শেষ হলে
করতে গোলাজাত,
ধামা, কুলোর ব্যবহার
চলবে দিন রাত।
সবার শেষে কুটোর পালা
দিতে হবে বাড়ি,
এক মসুমের কাজ শেষ
এবার হাফ ছাড়ি।
কবি পরিচিতি

নরেশ চন্দ্র হালদার। জন্ম অক্টোবর ১০, ১৯৬৬ সালে বাগেরহাট জেলার (তখন খুলনা জেলা) মোংলা থানার (তখন রামপাল থানা) মোংলা পোর্ট পৌরসভা (তখন চাঁদপাই ইউনিয়ন)-র কেওড়াতলা গ্রামে। পিতা হরেন্দ্র নাথ হালদার এবং মাতা সুভদ্রা হালদার।
১৯৭২ সালে সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ঐ স্কুলেই পড়াশুনা। তারপর ১৯৮২ সালে চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস. এস. সি.পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার অইর ১৯৮৪ সালে মোংলা কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. সমাপ্ত। ১৯৮৮ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান। ১৯৯৩ সালে ঢাকার তেঁজগাঁও কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এড. পাশ। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে খুলনা বি. এল. কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. পাশ করেন এবং ২০১৫ সালে মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
ছোটবেলার সেই গ্রামবাংলার মাঠ-ঘাট ও প্রতিদিনের জীবনযাত্রা তার স্মৃতিতে এখনো অমর। এইসব স্মৃতি যেমন তার লেখার প্রেরণা, তেমনি তার লেখার বিষয়ও বটে। তার কবিতায় তাই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় গ্রাম্য জীবনের এই সব খুঁটিনাটি প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠকদের পরিচয় হয় সেই জীবনের সহজ-সরল স্মৃতিমধুর ফেলে আসা পুরনো দিনগুলির সাথে।