সম্পর্কের আদমশুমারি
– অনিমেষ বিশ্বাস
সম্পর্কের বেড়া ভেঙ্গে বেরিয়ে গেছে কাছের মানুষ,
গতবারের আদমশুমারি নিছক একটা ভুল ছিল!
মানুষ এখন একের ভেতর অনেক হয়ে বাঁচে,
সূতার টান, সাঁকোর বাঁধন শুধুই টানা রেখাচিত্র
জীবন বাঁচে ভুল জলে বাতাসে, ঘুণপোকারা উল্লসিত-
স্বপ্ন বাঁচে ফোস্কা শরীর, নিঠুর কড়াই আঁচে।
স্থিতিস্থাপক নয় কিছু আর বাইরে ভীষণ টান,
সীমানা ছিঁড়ে সিলমোহরের হাজারটা অণু প্রাচীর
জীবন কোন জেরক্স কপিও নয় সস্তা নেব কিনে,
আমায় তুমি চাইছো না আর বুঝি কথার সুরে
যাতনা কেন পুষি মনে অনেক যতন করে,
বল কতটা মাশুলে গুনে নেব কাছের মানুষ চিনে!
অস্তিত্ব
– অনিমেষ বিশ্বাস
আরো একটু বিষ ঢালো
নিকষ কাল রাত্রির পেয়ালায়,
বিষাদের সুরে পিয়ানোর ছন্দে ভুলে
আকন্ঠ হেমলকে নীল করি কন্ঠ।
আরো জ্বালা আনো বিদর্ভ নগরের
ধুলো মাটি বাতাসে ভারী হোক নিঃশ্বাস,
কিছু আলো নিষ্প্রাণ রুদ্ধশ্বাসে
কার্বনের অক্সাইডে পূর্ণ হোক আকণ্ঠ।
আরো আরো মৃত্যু আনো
বেঁচে থাকা দ্বিধায় জাগুক,
শিখাহীণ তমসায় বাঁচুক,
ক্ষীণ কায় অণুজীব জীবন অফুরন্ত।
কী সহজ ভুলতে পারা
– অনিমেষ বিশ্বাস
কত সহজেই তুমি ভুলতে পার!
একাকি পাখি ডেকে ডেকে ফিরে গেছে,
অগ্রহায়ণের শষ্যক্ষেতের আল ধরে
ভিজিয়ে দিয়ে গেছে শীতল শিশির
মুখচোরা রোদ গোপনে ছুঁয়েছে শরীর!
তবু তুমি ভুলে গেছ কুয়াশার ভোর,
চাঁদ ওঠা রাত,
কানাছে অভাবী ছেলের বাঁশরীর সুর
ললাটের প্রথম চুম্বন,
কৌমার্য হারানো প্রগাঢ় আদর।
তুমি খুব সহজেই ভুলতে পার
তাই তো ভাল থাকার ইতিবৃত্তে তুমি,
শত সংশয় সহস্র উপেক্ষায়
জ্যোত্স্নার আলোর মত তোমায়
ধরে রাখতে পারে না কঠিণ হাত,
মনের বাঁধনও আর শিঁকল হয় না
শরীর-মনে শুধু তুমি বিচ্ছুরিত হও
বাকিটা থেকে যাও নিপাট অধরা।
নৈবেদ্য
– অনিমেষ বিশ্বাস
কালির আঁছড় কেটে
অযাচিত মৌণতার মিছিল ক্লান্তির স্লোগানে
তোমায় দিতে অর্ঘ দু’চারটি বাক্যের প্রসাদ,
কলাপাতায় স্মৃতির ভোগ;
নিষ্পাপ ধূপকাঠি হৃদয় জ্বেলে
যতটুকু স্নিগ্ধ সুগন্ধি মেলে,
জ্যোত্স্নার রং ধোঁয়া তারকার ডালি ভরে,
শেষ শতদল অনুসন্ধানে
ব্যকুলতায় ভরা আঁখি!
আঁখি কমল যে তাই পড়ে না মনে আর।
তোমার নৈবেদ্য সাজাতে ওগো তোমায় যে দরকার।
কাব্য কথন
– অনিমেষ বিশ্বাস
আমি তোর কবিতার প্রেমে পড়েছি
আমি তোর তিন আঙুলের ছোঁয়া বলপেন
যে ছবি এঁকে চলে
স্বীকার করে নিয়েছি তারই কাছে পরাজয়।
আমি নির্বাক, তোর অনুভূতির সাধনায়
তোর ছন্দের খেলা ঈস্পাতের শরীর হয়ে,
আমার অনাবাদী ঊষর জমিন
বারবার ক্ষতবিক্ষত করে
এ কি বন্ধুর চিহ্ন রেখে গেছে বুকে!
আমি তোর কলমেই বারবার জন্মেছি
আত্ম চিত্কারে প্রেম বিরহের বীজ বুনেছি,
কি অদ্ভুত তোর কালির ঘ্রাণ!
শব্দের স্রোতে আর বাক্যের জালে,
রূপোলি নিদ্রায় সোনালী স্বপ্নেরা পড়েছে ধরা।
আমি তোর কবিতার প্রেমে পড়েছি
বাঁধা পড়ে গেছি তোর ভাবনার
সুতাহীন প্রবল বাঁধনে।
কবি পরিচিতি

অনিমেষ বিশ্বাস। জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং মোংলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী মোংলা কলেজ) হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ হতে প্রকৌশলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশুনা। কোর্স সমাপ্ত করার পর প্রাণ আরএফএল গ্রুপে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে ইইউবি-তে ইইই বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে কোর্সটির শেষ সেমিষ্টারে অধ্যয়নরত।
ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। পড়া থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার – টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। এ পর্যন্ত ছয়টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ভাটিরদেশ অনলাইন পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছেন সহযোগী তথ্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য সাধনায় আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।