শিখতে হলে গ্রামে আসো
– এস ইউ আহমেদ
শিখতে হলে গ্রামে আসো শহরে যাও পরে,
অনেক কিছু শিখার আছে গ্রামীণ পরিবারে।
আদব-কায়দা, শালীনতা, দিতে হয় সম্মান,
কিভাবে করে কৃষি কাজ কিভাবে হয় ধান।
শেখার আছে অনেক কিছু মানবতার গান,
কষ্ট, দুঃখ শিখতে পারবে মেধার হবে শান।
মাটির সাথে মিশতে পারবে শিখবে সাঁতার,
ফসল ফলাতে কষ্ট কেমন কৃষাণ পিতার।
দেখবে কষ্ট আছে কত রকম, কত রঙের সুখ,
মাঠে-ঘাটে রৌদে খেটেও হাসিতে ভরা মুখ।
জেলেরা চলে গভীর জলে ডিঙি নৌকা বায়,
কেমন করে সাগর পানে ঢেউয়ের বুকে যায়।
রাস্তা-ঘাটে কাদায় মাখা পিছলে চলে পায়ে,
বেশি বৃষ্টিতে ডুবে গেলে নৌকায় চলতে হয়।
স্কুল যাদের অনেক দূরে দুই গ্রামের পর,
ছেলে-মেয়েরা হেঁটে চলে বলতে হয় না পড়।
অশিক্ষিত বাবা মায়ে করে মাঠে কত কাজ,
পরিশ্রম করে সারাটাদিন নাই তাদের সাজ।
ছেলে-মেয়েরা পড়া শেষে খেলে বিকেল বেলা,
একা একাই পড়তে বসে করে না তো হেলা।
বিদ্যালয়ে শিখিয়ে দিলে বাসায় এসে পড়ে,
শিখানোর নাই অন্য কেহ অশিক্ষিতার ঘরে।
নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিজেকে নিজে গড়ে,
অলসতা নাই তাদের অপেক্ষায় থাকেনা পরে।
সংগ্রাম শিখতে গ্রামে আসো বাস্তবতা কঠিন,
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বেঁচে থাকে কেমনে গ্রামীণ।
মাটির সাথে নদীর সাথে গড়ছে তাদের গতর,
মাটির গন্ধের সুবাস গায়ে যেন তাদের আতর।
সাদাসিধা সব গ্রামের মানুষ সাদা তাদের মন,
বড় চিন্তা মাথায় আসে না সর্বদাই মুখে গান।
হাসি খুশি চেহারা তাদের শুকনো দেহ খানি,
শত কষ্টেও ঝরে না যেন তাদের চোখের পানি।
শরৎ সৌন্দর্য
– এস ইউ আহমেদ
শরতের আকাশ জুড়ে
সাদা মেঘের ভেলা,
খানিক রোদ খানিক বৃষ্টি
করে যেন খেলা।
একটু কাদা একটু ভেজা
শুকনো মাঝে মাঝে,
সবুজ পাতা রৌদের আলোয়
রঙিন হয়ে সাজে।
নদীর ধারের কাশবনে
সাদা সাদা ফুল,
হেলে দুলে খেলছে যেন
শক্ত রেখে মূল।
কুমার-কুমারী লুকায় গিয়ে
কাশবনের মাঝে,
কেউ বা আবার ফুল দিয়ে
মাথায় বেনী সাজে।
মাঠে মাঠে ধানের ক্ষেতে
ঢেউ খেলে বাতাসে,
শিশির ভেজা ধানের শীষ
সকাল রৌদে হাসে।
বিলের ধারে শাপলা শালুক
খিলখিলিয়ে হাসে,
মনের সুখে ফিঙ্গে পাখি
নাচে গাছে গাছে।
কর্ম শেষে কৃষাণ তোলে
মুক্ত গলায় সুর,
নৌকা নিয়ে উজান মাঝি
যাচ্ছে অনেক দূর।
ঘরে ঘরে তালের পিঠা
কারো ভাপা-চিতই,
দাওয়াত করে আসতে বলে
ছোটবেলার সই।
শিউলি, জবা, কাশ, কামিনী
ফোটে নানান ফুল,
রাখাল বধূ যায় বাপের বাড়ি
দিয়ে কানে দুল।
আতা, কৎবেল, বাতাবিলেবু
নানান ফলের সমাহার,
শরৎঋতু হলো ঋতুর রানী
ষড়ঋতুর উপহার।
আঁকাবাঁকা কেশ
– এস ইউ আহমেদ
তোমার দেহের একটি অঙ্গ
আমার কাছে প্রিয়,
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবো প্রিয়া
একটু খুলে দিও।
দেখবো আমার নয়ন ভরে
ছুঁইবো আমি হাতে,
নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিবো
এলোমেলো প্রভাতে।
তোমার মুখের হাসি প্রিয়
হাসলে লাগে বেশ,
হাসলে যেন সব ভুলে যাই
অভিমানের রেশ।
শাড়িতে অনেক লাগে ভালো
সবুজে লাল পরী,
মনে চায় তোমায় ছুটে গিয়ে
হাতটি একটু ধরি।
গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলো
পিছনে থাকি চেয়ে,
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি
কেশগুলো যায় বেয়ে।
দেহের সাথে দুলতে থাকে
খোঁপায় খোলা চুল,
আমি কল্পনাতে হারিয়ে যাই
ছুঁয়ে দেই কানের দুল।
খোলা আকাশে নীলের মাঝে
সাদা পরীর বেশে,
খোলা চুলে নিতম্বের দোলে
মন কেঁড়ে নেয় শেষে।
সবুজ সমারোহ সবুজ শাড়িতে
একা পথে চললে,
পাগল করে দেয় সবুজ কন্যা
আঁকাবাঁকা কেশ দুললে।
প্রেম
– এস ইউ আহমেদ
তরঙ্গের দেশে আবেগের বেশে
নতুন প্রেমের আলাপন,
স্বপ্ন বুনে মনে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
কল্পনায় কত আয়োজন।
প্রেম এসেছে ঝর্ণাধারার বেগে
ভেসে আবেগের নৌকায়,
আবেগে আবেগে প্রেমিক-প্রেমিকা
উর্মিমালায় দোল খায়।
সমুদ্র তরঙ্গের মত উঁচু করে এসে
যৌবন জোয়ারে উতলায়,
উষ্ণ আবেগে ভালোবাসায় ভেসে
তীর খুঁজে নিতে চায়।
প্রেমিক-প্রেমিকা ঢেউ-তীরের মত
কাছে এলে বাড়ে তীব্রতা,
তীরে এসে যেন হতে চায় বিলীন
বাড়ে মনে প্রেমের উষ্ণতা।
ভরা কাটালে আবেগ ছোঁয়ার বসে
হয়ে যায় মত্ত দিশেহারা,
আবেগ নয় যেন ভালোবাসার রস
ছুটে চলে প্রেম গতিহারা।
সব ভুলে গিয়ে একবিন্দুতে গমন
স্পর্শ পেতে আয়োজন,
কাছাকাছি এসে আঁচড়ে পরে শেষে
বিনিময় হয় দুটি মন।
ক’দিন পরে এসে খুঁত পেয়ে শেষে
নিস্তেজে আবেগের ঢেউ,
তীর খুঁজে পেয়ে বালির সাথে মিশে
খুঁজে না আগের মত কেউ।
কমতে থাকে গতি অগোছালো মতি
এলোমেলো চলে দুজনা,
আবেগের শেষে চলে ভুলের দেশে
থাকে না আর আনাগোনা।
কবি পরিচিতি

এস ইউ আহমেদ। পুরো নাম মোঃ শাহাবউদ্দিন আহমেদ। জন্ম ১৯৮৭ সালে বরগুনার আমতলী উপজেলায়। ২০০৩ সালে আমতলী এম ইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ, ২০০৭ সালে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি হতে ২০১৬ সালে বি এস সি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং( সিএসই) এবং ২০১৭ সালে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, কুষ্টিয়া হতে এম এস সি ইন সিএসই সম্পন্ন করেন। বর্তমানে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এ টেকনোলজি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। গ্রামে বড় হলেও শহরে বেশি সময় কাটে এখন।
সাম্যবাদী কবি হিসাবে বাস্তব ও সাম্যবাদী বিষয় ও ভাবধারায় লেখালেখি করতে পছন্দ তাঁর। ছোট গল্পও লিখে থাকেন কবিতার পাশাপাশি। কবিতার প্রেমে পড়েই তাঁর কবিতা লেখার শুরু এবং এখনো কবিতা লিখতে ভালোবাসেন কাব্য প্রেমের লাবণ্য ও সৌন্দর্য সাধনায়।