ফতুর অপেক্ষা
– নরেশ বৈদ্য
এই বিকেলে ইচ্ছের আসা যাওয়া পথে
আনকোরা রসালো ফানুস ঘুড়ির আঁচে শতেক স্বপ্ন এঁকে ছিলাম
অলিগলি পথ পেরিয়ে একেবারে সমুদ্রের তীরে ঢেউ গোনার দায়িত্বও নিলাম
কিন্তু বদলে গেলো সে পথ গভীর বাঁকে হঠাৎ ঝলসানো রক্তপাতে
আলগোছে মন টুকরো বাঁধন শোকেশের বাহারি স্রোতে
না, আমি একটুও বদলাতে পারিনি নিজেকে
এই গা ছুঁয়ে বললাম,আজও ভিড় করে আনাচে কানাচে
তাই কি কথায় ওঠে ঝড় কিংবা ঢেউ–
হাজারো টুকরো স্মৃতি বোঝার মতো সে মন কোথায়?
রয়ে গেলো বোধের গভীরে একটা দীর্ঘ বসত-ফতুর অপেক্ষা!
আজ আর কোন কথা নয়
– নরেশ বৈদ্য
অবাক চোখে দেখছি শুধু
প্রকৃতির অদ্ভুত রঙিন ছটা
দিগন্তে আলোকমালা আঁধারেতে গেছে হারিয়ে
নীলাম্বরী পোয়াতি মেঘের তটসীমানায়।
ঝিরি ঝিরি ঝরে পড়ে বৃষ্টি কণা
মায়াময় মুগ্ধতা বিরাজে ধরায়
বয়ে চলে দেয়ালজোড়া গল্পবিথান।
এই তো সুযোগ জগৎ দেখার
দুচোখ জুড়ে মগ্ন মায়া
অদ্ভুত আশার আলতো ছোঁয়া
শুধু প্রেম, দাপিয়ে বেড়ায় রঙিন ঝলমলে আহ্লাদে
হৃদ সাগরের কোণায় কোণায় বৃষ্টিতে ভিজবার।
তবুও–
– নরেশ বৈদ্য
আকাশ কুসুম ভাবনা ছোঁয়া জানতে তুমি
আমি বুঝতাম ঝরাপাতার স্থায়িত্বটা
তবুও আমি ধেয়ে গেছি কিসের আশায়?
জানবে তুমি একটু খানি আগুন মাখা
কথা দিয়ে চেয়ে ছিলাম কাব্য গাঁথা।
জেনেছিও অনেক আগে মনের খবর
তোমার কাছে হাসির খোরাক গল্প বহর
তবুও যে মনে প্রাণে চেয়েছিলাম বেড়েই চলুক
হতে ও পারে বিন্দু কণায় সিন্ধু আঁকা
সত্যি কথা বেরিয়ে এলো সহজ ধারায়।
আমি শুধু রয়ে গেলাম সেই তিমিরে
যেথা সকল সবুজ সাথী অলীক স্বপ্ন গেছে ক্ষয়ে
তবুও যে অবাক করা গল্প বিতান যাবে রয়ে
তোমার কাছে হতে পারে সবই বেকার
আমার কাছে দীপ জ্বালানো বর্ণমালার নতুন সাকার।
অপেক্ষার কালবেলা
– নরেশ বৈদ্য
অনুরোধের শব্দ ব্যঞ্জনা মৃত কফিনের রঙ ছুঁয়ে যায়
অনুরাগের না থাকা শরীর জুড়ে চুপি চুপি কথা রাখা খেয়া বায়
চাতকের বুকে যে পাথর সুনামির বহ্নিশিখায় বেঁধেছে বাসা
সেখানে আজ পূর্ব রাগের চকিত চাহনি খোলা চুলের সন্ধ্যানামা বৃথা আশা
বদলে গেছে গোলাপের শখ প্র্যাকটিক্যালি টিকটক হয়েছে চেনা
জানি তো উড়ে যাওয়া পাখিটিকে ঘিরে
মৃত্যু মিছিলের ঘরে বসে স্মৃতির প্রদীপ জ্বালানো ছন্দপতন সান্ত্বনা।
কবি পরিচিতি
নরেশ বৈদ্য। জন্ম ২৭ শে অক্টোবর ১৯৭৯, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। পিতা: স্বর্গীয় জগন্নাথ বৈদ্য,মাতা: মনোরোমা বৈদ্য। পাঁচ সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কনিষ্ঠতম।
বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার- সোনারপুর থানার অন্তর্গত বিবেকানন্দ নগরে- কলকাতা-৭০০১৫০-স্থায়ী বাসিন্দা। পড়াশোনা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এম কম)।
কবির কলমে কবিতা জেগে ওঠে স্বতঃউৎসারিত অন্তরপ্রেরণা থেকে – জীবনের বোধের অন্তর্নিহিত চেতনায় ভাস্বর হয়ে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: জীবনের রং তুলি, প্রেমের ঝর্ণাধারা, খেয়ালী আলোর ভেলা, যৌথ কাব্য সংকলন-৬-এ ছক্কা, দোহার, আকাশ গঙ্গা ও মোহনা।