গৃহস্থ বাড়ি
– নরেশ চন্দ্র হালদার
জায়গা জমি অনেক আছে
করে জমি চাষ,
ধানের সাথে শাক সবজি
ফলায় বারো মাস।
গোলা ভরা ধান আছে
পুকুর ভরা মাছ,
গোয়াল ভরা গরু আছে
করে জমি চাষ।
রান্নাঘর, গোয়াল ঘর
আছে ঢেকি ঘর,
কাছারি ঘর বাইরে আছে
ভিতরে থাকার ঘর।
অনেক মানুষ এক বাড়িতে
থাকে মিলেমিশে,
বাড়ীর কর্তা সবার শীর্ষে
চলে তার নির্দেশে।
আত্মীয় স্বজন এলে পরে
খাতির যত্ন করে,
হাঁস, মাছ দু’টোই আছে
খাও পেট ভরে।
সবার শেষে আম কাঁঠাল
আরো আছে দুধ,
বাড়ীর গিন্নীর মন ভালো
রাখে না কোন খুদ।
গাছি কৃষাণ আছে বাড়ি
কাটতে খেজুর গাছ,
রস পেড়ে গুড় বানানো
তার প্রধান কাজ।
চিড়ে কোটার ধুম পড়ে
পূজার সময় হলে,
খৈ ফোটানো, মুড়ি ভাজা
তাও সাথে চলে।
দড়ি পাকানো, জাল বোনা
বড় কৃষাণের কাজ,
কাজের মাঝে জাগলে নেশা
বলবে তামাক সাজ।
ছিলুম, কল্কে, তামাক, আগুন
সবই আছে ঘরে,
কাজের সাথে তামাকটাও
খাবে আরাম করে।
মাছে ভাতে বাঙালী
– নরেশ চন্দ্র হালদার
বাড়ীর পাশে খাল আর
খালের পাশে বিল,
গরু মরলে দেখা যেত
কুকুর, শকুন, চিল।
খালে বিলে মাছ মারতে
ছিলো না তো বাঁধা,
মাছ ধরতে গেলে পরে
গায়ে লাগতো কাদা।
নদী, খালে জাল বিছালে
ভরতো খালোই মাছে,
আনন্দেতে ফিরতো সবাই
বাড়ী ছিলো কাছে।
গভীর খালে জলের তলে
ছিলো অনেক মুড়ো,
মাছের খনি ছিলো সেথা
জানতো গাঁয়ের বুড়ো।
জোয়ার এলে দলে দলে
ছুটতো নদীর পানে,
মাছ ধরে ফিরতো বাড়ী
দারুন খুশি মনে।
“মাছে ভাতে বাঙালী”
মাছ ধরে আর খায়,
দুঃখ কষ্ট নেইতো মনে
আনন্দে দিন কাটায়।
চাষের সময় এলে পরে
করে জমি চাষ,
এক ফসলে গোলা ভরে
চলে বারো মাস।
তেল নুনের দরকার হলে
যায় চিলার হাটে,
হেঁটে যেতে না চাইলে
নৌকা বাঁধা ঘাটে।
ধামা নিয়ে হেঁটে যায়
গাঁয়ের কিছু লোক,
ফুর্তি করে বাজার করে
দেখে জুড়ায় চোখ।
হাটে এলে দেখা মেলে
অনেক লোকের সাথে,
সুখ দুঃখের আলোচনায়
কিছু সময় কাটে।
হাট শেষে বাড়ী ফেরে
আসে পরের হাটে,
এমনি করে বছর ধরে
সুখে দিন কাটে।
ফিরে পাওয়া যাবে?
– নরেশ চন্দ্র হালদার
খড়ম পায়ে কর্তা যায়
গাঁয়ের পথ ধরে,
মা বধুরা আনছে জল
কলস কলস ভরে।
লাঙ্গল কাঁধে গাঁয়ের চাষী
মাঠের দিকে যায়,
গরুগুলো আগে আগে
সেদিক পানে ধায়।
মুখে তাদের আছে ঠুসি
চলবে সোজা পথে,
এদিক ওদিক করলে নড়ি
পড়বে সাথে সাথে।
হাঁটুরেরা যাচ্ছে হাটে
কিনতে মালামাল,
মাছের আশায় জেলে ভাই
ফেলছে খালে জাল।
রাখাল ছেলে আপন মনে
বাজায় বসে বাঁশি,
গরুগুলো বাঁধা আছে
দিয়ে মোটা রশি।
ভাবনা বিহীন কাজের মাঝে
আছে সবাই ডুবে,
এমন সুখের দিনগুলো কী
ফিরে পাওয়া যাবে?
কবি পরিচিতি

নরেশ চন্দ্র হালদার। জন্ম অক্টোবর ১০, ১৯৬৬ সালে বাগেরহাট জেলার (তখন খুলনা জেলা) মোংলা থানার (তখন রামপাল থানা) মোংলা পোর্ট পৌরসভা (তখন চাঁদপাই ইউনিয়ন)-র কেওড়াতলা গ্রামে। পিতা হরেন্দ্র নাথ হালদার এবং মাতা সুভদ্রা হালদার।
১৯৭২ সালে সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ঐ স্কুলেই পড়াশুনা। তারপর ১৯৮২ সালে চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস. এস. সি.পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার অইর ১৯৮৪ সালে মোংলা কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. সমাপ্ত। ১৯৮৮ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান। ১৯৯৩ সালে ঢাকার তেঁজগাঁও কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এড. পাশ। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে খুলনা বি. এল. কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. পাশ করেন এবং ২০১৫ সালে মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
ছোটবেলার সেই গ্রামবাংলার মাঠ-ঘাট ও প্রতিদিনের জীবনযাত্রা তার স্মৃতিতে এখনো অমর। এইসব স্মৃতি যেমন তার লেখার প্রেরণা, তেমনি তার লেখার বিষয়ও বটে। তার কবিতায় তাই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় গ্রাম্য জীবনের এই সব খুঁটিনাটি প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠকদের পরিচয় হয় সেই জীবনের সহজ-সরল স্মৃতিমধুর ফেলে আসা পুরনো দিনগুলির সাথে।