গন্তব্য কোথায়?
– পারমিতা ব্যানার্জি
পা ফেলার মাটি পাই না!
চটি পরা পা, জুতো পরা পা,
সঙ্গে কাদা মাখা পাও আছে।
মাটি জুড়ে পায়ের আলপনা ।
কেউ হাঁটতে চায় না।
জায়গা বেহাত হবার ভয়!
বাঁ কানে আশ্বাস বাণী,
ডান কানে ফিরে পাওয়ার ধ্বনি!
চটি পা, মুখে এগিয়ে যেতে বলে…
জুতো পা, আরো চওড়া জুতো প’রে।
আরো জায়গা চাই তার!
কাদা মাখা পা, চোরা কাদায় ডুবে যায়।
কেউ একচুলও নড়ে না।
প্রেম ঝংকারে
– পারমিতা ব্যানার্জি
বৃষ্টি _
যখন ফোঁটা ফোঁটা,
একটা ছোট্ট সুখ!
পদ্ম পাতায় মুক্তো হয়ে হাসে!
বৃষ্টি _
ঝমঝমিয়ে নামলে
উথাল পাথাল __
টলটলে প্রেম চলকে পড়ে ঘাসে!
বৃষ্টি _
পাতায় পাতায় __
কত যে প্রেম বাহার!
রোদ উঠলে উবে হাওয়ায় ভাসে!
বৃষ্টি _
মেঘলা আকাশে
উদাসী আনমনা!
মুখ লুকিয়ে প্রেম যায় পরবাসে!
হঠাৎ বৃষ্টি
– পারমিতা ব্যানার্জি
মনটা আজ উদাস বাউল
মেঘলা দুপুর সাজে!
শীতল হাওয়ায়, রিমঝিম
বৃষ্টি-নূপুর বাজে!
তপ্ত আবেগ জৈষ্ঠ্য মাসে
পাগল প্রেম-নেশায়!
বকুল গন্ধ চাইল সোহাগ
মেঘ ময়ূরীর দিশায়!
শুষ্ক ধরা ভিজল খানিক
পেলব কাব্য সাঁঝে!
আড়াল-কথা মুক্তি পেল
প্রেম চিঠিরই ভাঁজে!
দুষ্টু মিষ্টি বৃষ্টি
– পারমিতা ব্যানার্জি
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি!
ভাদ্র শুরুর সৃষ্টি!
এক ছাতা দু’মাথা!
ভীষণ দুষ্টু মিষ্টি!
কখন মেঘ কখন রোদ!
ওদের মনে একই বোধ!
নীল আকাশের খেলা _
ভাব আড়ি শোধ শোধ!
সূরজ মেঘের পাশে,
বিকেল বেলায় হাসে।
শেষ দিবসের ব্যথা,
ওদের দীর্ঘ শ্বাসে __!!
ফিরছে বকের সারি ।
যাবে যে যার বাড়ি!!
বিদায় বেলা এলো __
এবার ছাড়াছাড়ি!!!
ভাদর আদর
– পারমিতা ব্যানার্জি
ভাদ্র মাসের আকাশ __
আধখানা রোদ, আধা মেঘ!
চালকুমড়ো
আর নারকেলের সমঝোতা!
টকের ডালে __
চালতার বিপ্লব… জিভ টাটায়!
উঠোন বাগানে
সোমত্ত লাউডগায় যৌবন যেন
হিসহিসিয়ে ওঠে…
শক্ত সমর্থ খুঁটি খোঁজে।
রাত বাড়লে আটপৌরে চাঁদ
শিউলি তলায় লুটোয়!
কুঁড়িরা একটা করে নিঃশব্দে
পাপড়ি মেলে তখন…
ওরা মাটি ছুঁলেই সুন্দর!!!
শেষ রাত আড়মোড়া ভাঙে…
প্রেম বুঝি বনবাসে গেল তখন!!
কাশের বার্তা
– পারমিতা ব্যানার্জি
আয় ছুটে আয়
শরৎ হাওয়ায়
বিলের ধারে কাশবনে।
বল্ যাবি কে?
ছায়ার ঝোঁকে
মেঘ ও রোদের গুঞ্জনে!
দল ছুট ছেলে!
গেছে মা চলে?
হাল ফেরাতে সংসারে!
আয়রে চলে
খেলব বলে
পাগল-পারা বিল্ ধারে!
বাতাসে ছন্দ,
পুজোর গন্ধ,
আটকাবে কোন ভাইরাসে!
ঠাকুর আসবে
হাসিও ফুটবে
দিচ্ছে খবর শ্বেত-কাশে!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।