আমি এখন একখন্ড মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই নই
– কল্লোল সিং
অনেক জানালা বন্ধ হতে হতে
মুখখানা তোমার কখন ভেসে চলে যায়, মনে নেই –
মৃত্যুপথে, আবেগ নিবদ্ধ রেখে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি কেউ কখনও, আমিও
ছাড়িয়ে যাচ্ছি তোমার ষ্টেশন দ্রুত গতিবেগে, নিয়ন্ত্রনহীন আমার আমিকে…..
ছুটেছি কুয়াশাচ্ছন্ন ফ্যাকাশে আকাশ, মেঘে রোদ ঢাকা মাঠে
অথবা সরু কোনো সাদা-কালো রাস্তার অজানা চিত্রপটে !
সিনেমার শেষ দৃশ্যের মত কালো পর্দার আগে
অনেক জানালা বন্ধ হয়ে, শব দরজায় শুধু “আমি” আটকে রই
এখন একখন্ড মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই নই !
স্বার্থপরতা
– কল্লোল সিং
মহাকাল হিসাব রাখেনা
কত সহস্র নিযুত উল্কাপিণ্ড খসে পড়ে…
জ্বলে উবে যায় খোলা আকাশে।
আমরাও জ্বলে উঠবার
তীব্র আকাংখা নিয়ে খসে পড়ি!
মহাকাল হিসাব রাখেনি
কত অযুত আলোকবর্ষ মহাকাশ যুগ পেরিয়ে
পৃথিবীর কত তম অক্ষের ঘুর্নিতে
আমরা স্বার্থপর হতে শিখেছি।
কত নিরীহ পরিবেশ বান্ধব জীবপ্রাণ
অবহেলায় বা প্রয়োজনের তাগিদে,
নিরুপিত সময়কালের আগেই
সবুজ পৃথিবী ছাড়া করেছি!
শূন্যপুর
– কল্লোল সিং
নিজেকে ধরতে চেয়ে হাতড়েছি অনেক দূর
বসন্ত বালিআড়ি পার হয়ে, শেষমেশ মিলেছে শূন্যপুর।
অধরাকে ধরলে যদি, শুরু হয় শুরু থেকে
সেই ভয়ে আটকে থাকি ঠিক যেখানে সেখানেই,
ছেড়ে দিয়ে ধরতে চাইলে আপন হারাই অজান্তে।
সত্যি আলো
– কল্লোল সিং
রাতের আঁধার তুমি যারে দ্যাখো চোখে
মহাকাল চলে তার আপন আলো মেখে।
আঁধারের হাত ধরে আঁধারেই দেখা হবে
সত্যি আলোর দ্যাখা দেখ ঠিক মিলে যাবে।
মনের আড়ালে যদি মেঘ নেমে আসে
মিথ্যে আলোয় ঘরে কেউ রাখে না মনে।
তুমি যারে আলো ভেবে নিলে কোলে তুলে
দিনের আকাশ দেখ, মেঘের ছাদের পরে আর কিছু না পেলে!
রাতের আঁধারে তুমি দেখ চোখ মেলে
সত্যি আলোর দ্যাখা দেখ ঠিক যাবে মিলে।
মরিচিকার আলোয় যে ভরে দিল অন্ধকারে
রাতের আঁধার ঘরে রবে না কেউ সরে।
কবি পরিচিতি

কল্লোল সিং। জন্ম জানুয়ারি ২২, ১৯৭৮ সাল। পিতা স্বর্গীয় মাইকেল সিং, মাতা কুমকুম সিং। স্থায়ী বাসস্থান – এনিও পাড়া, শেলাবুনিয়া, মোংলা, বাগেরহাট। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত, দুই সন্তানের জনক। পড়াশুনা এম বি এ (ফিন্যান্স) এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। বর্তমানে কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
মোংলার উপজেলার শেলাবুনিয়া এলাকার স্নেহের নোনা হাওয়া, জোয়ার ভাটার নদী জলে, আলো বাতাসে, সবুজের ছোয়ায় বেড়ে উঠেছেন। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বেশিরভাগ সোনালি সময় (১৯৮৫-২০০২) সেন্ট পলস হাই স্কুলে, শেলাবুনিয়া ও কাইনমারি এবং মোংলার অববাহিকায় আতিবাহিত করেছেন।
জীবনের উপলব্ধি সাদাকালো চেহারায় প্রকাশের আনন্দ অনেকের কাছে কবিতা মনে নাও হতে পারে – কিন্তু তার কাছে এই প্রকাশের আনন্দ অপরিসীম অনবদ্যতা নিয়েই উপস্থিত হয়েছে। নিজেকে কখনও কবি না ভাবলেও বা কবি হিসাবে পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ থাকলেও তার লেখায় এক বিশেষ কাব্যিকতা ফুটে উঠেছে। এই সব ভাবনা ও লেখার সামান্য কিছুও যদি কারো ভলো লাগে তবে মতামত জানানোর অনুরোধ রইল – তিনি আপ্লুত হবেন। এছাড়া সবার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থী তিনি।