আফরোজা হীরা – কবিতাগুচ্ছ

নারী

– আফরোজা হীরা

নারী-
তোমায় নদী বলে ডাকলেই কেন ঢেউ খেলিয়ে দেও মনের গোপন কোণে?

মিথ্যে প্ররোচনায় কেন অনবরত ছুটে চলার সাধ তাহার সনে?

বোকা মেয়ে, ওদের মতো তোমার শরীরেও রক্তপ্রবাহিত হয়
জল নয়।

তুমি তো দুগ্ধবতী,
বিশুদ্ধ দুগ্ধদানে গড়ে তুলেছো- এক একটি পুরুষ।

যে কবিতায় তোমার নদী নামে ডাকা হলো
পরের লাইনেই যে সে নিজেকে সাগর বলে ঘোষনা করলো
বুঝলে তো ভালবাসার অর্থটা ?

কেউ একজন তোমায় ফুল বললো
আর-
অমনি একে একে মেলে দিলে
পাপড়িগুলো সব !

এতোটা কোমল কবে ছিলে বলো তো?
পৃথিবীতে প্রথম লাঙ্গল ধরেছো তুমি,
মাটির বুক চিরে শস্য ফলিয়ে পুরুষকে দিয়েছ তার নাম করণের স্বাধীনতা।

ধারণ করেছ নিজেকে বিদ্ধ করে, বহন করেছ নিজেকে শুদ্ধ করে…

পাথর ভাঙ্গার হাতুড়ি থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের বন্দুক
কোনটা ধরোনি তুমি?

অথচ তুমি হলে গোলাপ, বেলি, জবা…

চাইলেই যার সৌন্দর্য্য উপভোগের পর দুমড়ে মুচড়ে পায়ের তলায় পিষে ফেলা যায়!
নারী
তুমি তো ছায়াদাত্রী, তাহলে তোমার নাম কেনো বটবৃক্ষ হলো না?

চাঁদ বললেই কেন খুশিতে ঝিলমিল করে ওঠো?
আয়নায় কি কখনো নিজের চেহারা দেখো নি তুমি?
তোমার শরীরের কোন অংশটা জড় পদার্থের মতো নারী?

বিশ্বাস না হলে পেটের উপর হাত রেখে দেখো
কী, অনুভব করতে পারো কিছু?

তুমি জন্মদাত্রী, চাইলেই পৃথিবী ভরে দিতে পারো অসংখ্য জীবন্ত হাসিতে।
সময় নিয়ে একদিন ভেবে দেখো
কেন কখনো ভালবেসে সূর্য নামে ডাকা হলোনা তোমাকে!

নারী, তুমি নদী ফুল চাঁদ জড় পদার্থ কিচ্ছু নও
দেখিয়ে দিলাম চোখে আঙ্গুল দিয়ে
পারলে এবার মানুষ হও –

পারলে একবার নারীও হও …

এখনকার মসজিদে খোদা থাকেন না

– আফরোজা হীরা

মসজিদগুলোর দিকে তাকালে-
আজকাল আর উপাসনালয় খুঁজে পাই না।
মনে হয় যেন এক একটি বিলাস-বাগান।
হারাম টাকা হালাল করার লক্ষ্যে-
প্রতিটা কোণে কোণে তার জৌলুশ গুঁজে দেই আমরা,
পথের দুধারে দু’চারটে পুষ্পবৃক্ষও রোপণ করি।
অথচ, অদূরেই শেফালীর ভাতের হাড়ি শূন্য,
মাস পেরিয়ে যায়, দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে আব্দুর রহীম।
আবার এসবের অনেক কিছুই থাকে আমাদের নিকট আত্মীয়ের ঘরে,
সেদিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপও নেই।
পাক্কা ব্যবসায়ী আমরা,
পরকালে একখানা টাইলস আর ঝাড়বাতি সমৃদ্ধ জলসার নিশ্চয়তা চাই।
আর তাই উপাসনালয়টাকেই ব্যাংকের বিকল্প বানিয়ে নিয়েছি।
এখনকার মসজিদে জৌলুশের পাশাপাশি মুসল্লিও আছে ঢের!
শুধু, সেই নামাজী নেই।
এখনকার মসজিদে তাই খোদাও নেই।।

সময় এখনই

– আফরোজা হীরা

জানিতো, এখন সময় নয় সত্য বলার
আজ যদি না বলি!
তবে বলবো কবে আর?
ফাল্গুনের রক্তের দাগ শুকাতে দেয়না
চতুর শিমুলের ডাল,
চুপিচুপি বলে যায় কানে কানে
আজ থাক,
যা বলার বলো আগামী’কাল।
এভাবেই পেরিয়ে যায় যুগ-যুগান্তর
ভাব লেশহীন বাকরুদ্ধ আমি
শকুনে খুবলে খায়-
বিবেকের অন্তর।
ভাবের ভেতরে নজরুল পুষি
অথচ ভয় পাই জল্লাদের ফাঁসি!
বইয়ের পাতায় বায়ান্ন দেখেছি
একাত্তরও মলাটের ভাঁজে থাক,
ঘুণ পোকারা মাথার ভিতর
যা কিছু খুবলে খাচ্ছে, খাক।
ভন্ডামীটাও যাচ্ছি শিখে একটু একটু করে
দাঁত কেলিয়ে হায়েনা হাসে, বিবেকের দ্বার ধরে।
কথা কোথায়? কথা কোথায়!
মন খোলেনা আর,
ভুলে গেছি আজকে আমি, যা ছিল বলার।
আজ যদি না বলি তো!
বলবো কবে আর?

সিংহ বনাম গাধা

– আফরোজা হীরা

নির্বাচনের নতুন হাওয়া​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বইছে দেশে ভাই,​
গাধার হেথায় জয় জয়াকার​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সিংহের কদর নাই।​
গাধাগুলো নিরাপদ ভারি​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ হুকুম তামিলের তরে,​
যেমনি নাচাই তেমনি নাচে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ যা বলি তাই করে।​
সিংহের হল উচ্চ শির​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ জন্মগত স্বভাব,​
কথায় কথায় মুখের উপর​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেয় খালি সে জবাব।​
সুযোগ পেলেই কখন জানি​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মটকাবে সে ঘাড়!​
আমার চেয়ারে বসে শেষে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চিবাবে আমার হাড়!​
তার চেয়ে ওই গাধাই ভালো​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ থাকুক আশে পাশে,​
করব যাহা সইবে তাহা​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ থাকবে খুশি ঘাসে।​
বাঘগুলো সব আগেই ধরে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ রেখেছি পুরে খাঁচায়,​
আমার সাথে লড়তে আসিস?​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেখি এবার কে বাঁচায়!​
ধুকে ধুকে মর সকলে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ গণতন্ত্রের মুখে ছাই,​
গাধা ছাড়া আমার কাছে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ আর কারো ঠাঁই নাই।​
শেয়াল পণ্ডিত কিছু এখন​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মিশেছে গাধার দলে,​
আখের গোছাতে ব্যস্ত তারা​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ জী হুজুরের ছলে।​
হায়েনারা সব সুযোগ পেয়ে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লুটেপুটে খায়,​
গাধার সভায় রাজা আমি​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেশের যে বাঁশ যায়।


কবি পরিচিতি

আফরোজা হীরা। জন্ম নভেম্বর ২২, ১৯৭৯ সালে। বাবা কাজী আবুল কাশেম এবং মা আমেনা বেগমের প্রথম সন্তান। ব্যক্তি জীবনে নানা রকম সেবামূলক কর্মকান্ডে তিনি জড়িত। এক কন্যা সন্তানের জননী হলেও নিজেকে হাজার সন্তানের মা বলে মাতৃত্বের পরিচয়ে গর্ববোধ করেন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে মোংলা উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক ও মোংলা পোর্ট পৌরসভার নগর উন্নয়ন প্রকল্প (TLCC) এর সদস্য হিসেবে সামাজিক উন্নয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ইউ এন ডিসি এর মোংলা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে পথ-শিশুদের জন্য কাজও করেছেন।

পার্বতী পারু – এই ছদ্মনামে লেখালেখির জগতে তাঁর পদার্পণ। লেখার মধ্য দিয়ে মানবতার কথা বলা এবং সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এ যাবত উপন্যাস, একক ছোটগল্প, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ছড়া, কাব্যগ্রন্থ, এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থ মিলিয়ে মোট বিশটি বই প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং কোলকাতায়। লেখালেখির বাইরে বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সাথেও সম্পৃক্ত তিনি। বর্তমানে সার্ভিস বাংলাদেশ এর নারী শিশু ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এবং দুর্জয় বাংলা সাহিত্য গ্রুপের খুলনা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া দখিন হাওয়া সাহিত্য পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসাবে মোংলায় সাহিত্য চর্চার বিকাশ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর – মোংলায় বইমেলার প্রথম আয়োজনও করেছেন নিজের প্রকাশিত বই দিয়ে নিজস্ব প্রচেষ্টায়।