যোষেফ হাজরা – কবিতাগুচ্ছ ২

রং মুখোশ

– যোষেফ হাজরা

কালো রং গায়ে মেখে দেখ অতটা পাপী তুমি নও
সাদা রং গায়ে মেখে দেখ অতটা পবিত্র তুমি নও

সবুজ বীথিকার পাশে এসে দেখ তুমি যতটা সামাজিক ভাবো ততটা নও
নীল আকাশ জলে অবগাহন করে দেখ ততটা প্রেমিক তুমি নও

লাল অঙ্গার গায়ে মেখে দেখ কতটুকু কষ্টইবা আছে মনে
হলুদ প্রসাধন গায়ে মেখে দেখ কতটুকুইবা সুখী হতে পার

বেগুনি রঙের মত শোক তোমার গাঢ় থাকবেনা কোনদিন
গোলাপী রং তোমার সব সময় সম্পর্কে বাঁধবে না

সোনালির মত রাজকীয় কেউ হতে পারে না কখনও
রূপালীর মতো ঐতিহ্যগুলো অক্ষয় কি হয়?

ধূসরের মত স্বপ্ন মিলিয়ে যায় না
মেরুনের মত আবার নিশ্চিত হয় না

শরীরের রঙে শরীর মিশিয়ে দেখ তা কি এক?
মনের রঙে সব মনের রং লাগে না

কালো রঙের মত কালো রং হয় না
সাদা রঙের মত সাদা রং হয় না

রংগুলি রঙের মত হয় না
রংগুলি রঙের সীমানাতেও সীমা বাঁধা যায় না

মৃত্যু আমার অধিকার

– যোষেফ হাজরা

ইতিমধ্যে সব কিছু কায়েম করে ফেলেছি
সুখ, সম্ভোগ, বিশাল অট্টালিকা, দাস-দাসী
যা কিছু হলে একজন মানুষ
নিজেকে বিশিষ্ট ভাবতে পারে

অবশেষে আমি মৃত্যুঞ্জয়ী হতে চাই
পৃথিবী ধ্বংসের শেষ দিন পর্যন্ত
বা তার পরেও যদি কিছু থাকে
না কোন স্বর্গরাজ্য নয়
কারণ তা আগেই কিনে ফেলেছি

নেতৃত্ব, বা নারী এমনকী একটি গোটা দেশ
আমাকে সেলাম করতে করতে ক্লান্ত
কিন্তু সকলে মুখে ছড়িয়ে গেছে
আমি সবচেয়ে ভীত এক নাগরিকদের একজন
তা না হলে কী নিজের সুরক্ষার জন্য
পুরো একটি দেশের জনগণকে বশ করে রাখতাম

এমনকি রাস্তার হাড়হাভাতে ভিক্ষুক পর্যন্ত
নিজেকে নিজেই সুরক্ষা দিতে সক্ষম
কোন মৃত্যুর ভয় তারা করে না
জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে বেঁচে থাকাটাই জীবন
বাকিটুকু যা আছে জন্মের আগে
আর মৃত্যুর পরে
সেটুকুই চিরস্থায়ী
সর্বোচ্চ অধিকার

সব মায়া ত্যাগ করে
আমাকে আমার অধিকার কায়েম করতেই হবে
না, না, কোন স্বর্গ বা নরক প্রত্যাশী আমি নই
আমি একজন নির্বাণবাদী
মৃত্যুই আমার অধিকার

ভূমিহীন অন্নদাতা

– যোষেফ হাজরা

ছাড়ো ছাড়ো দুষ্টচারী পৃথিবীর যত রাজা
ছেড়ে দাও খামচি ধরা সবুজের অধিকার।
ওখানে ফলে সবুজ শান্তি, সোনালি শষ্য
কৃষকের ঘরে জন্ম নেয় অন্নদাতা ত্রাণকর্তা।
তারা পেষিত, তারা দলিত, তারা ভূমিহীন
তারা শোষিত।
তারা দিকে দিকে বিপ্লব এনে, নিজে করে অনাহার।
তোমরা কী তাদের শান্তি দিতে পার না অচ্ছার?

ওই গোয়ালেই যিশুরা জন্মে,
ওই বনভূমি চিরে মরে পড়ে থাকে কত ত্রাণকর্তা মশীহ।
তোমার অর্থ, যশ, প্রতাপে করছে তাদের হেয়।
তোমরা ছেড়ে দাও,
নাইলে তোমার মাথা থেকে ছাড়ানো হবে
রাজ্যের যত অনাচারী ভূতগুলো।

তোমাদের সামনে সাজানো থাকে যে রসনার প্রকরণ
তোমরা কী করেছ এই শ্রমের মূল্য নির্ধারণ?
যাদের সোনার অঙ্গ গেছে শষ্য ফলাতে ক্ষয়ে
যারা জীবন দিয়ে ভরেছিল সবুজ,
কী পেল এই দুঃখ বয়ে?


কবি পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি।

আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।

আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।