কালিদাস রায় – কবিতাগুচ্ছ

মহামারী

– কালিদাস রায়

ধরণী আজি মহামারীতে
দিশেহারা প্রাণিকুল,
চারিধারে শুধু হাহাকার শুনি
জ্ঞানীগুণী হয় ব্যাকুল।

পাপের রাজ্যে অনাচার ব্যভিচার-
আচার ভুলিয়া সবে,
ধর্ম গুলোই ধ্বংস করে-
ধর্ম ধর্ম রবে।

ঘরে নেই চাল, কাঁদিছে বাছা,
লুকায়ে জননী কাঁদে,
থেমে গেছে যান, দূর পরবাসে
পড়িয়া মরণ ফাঁদে!

হাঁটিতে হাঁটিতে ক্লান্ত শরীর
ধূলায় গড়াগড়ি,
মাকে জাগাতে অবোধ শিশু
টানিছে চাদর ধরি!

সন্তান হারায়ে কাঁদিছে পিতা
ভাইয়ের লাগিলো শোক!
স্বামীর শবখান নিয়ে নির্বাক-
শ্মশানেও দুর্ভোগ!

এ কেমন মরণ দিলে বিধাতা?
মরা ফেলে লুকায় ডরে!
মানবতা বুঝি ধ্বংসই হলো
ভাবতেই অশ্রু ঝরে।

বাস্তবতা

– কালিদাস রায়

মনটা আমার বেজায় খারাপ,
সইবো কেমন করি?
পাঁজড়গুলো যায় গো ভাঙ্গি-
শুধু লাশের সারি সারি!
মানব সবে দানব হলো,
মূর্খেরা সব জ্ঞানী!
ধার্মিকেরা ধর্ম ছাড়া,
সাধুর হয় হয়রানি!
অনাহারে মরছে গরিব
কারুর পকেট ভারী,
কারুর থালায় কোরমা-পোলাও
শূন্য কারুর হাঁড়ি।
মরণ কালে শেষ বিদায়ে
নেয়নি খবর কেউ,
এমন রোগে ভরলো ধরায়
ভাঙ্গে ব্যথার ঢেউ!
ভুলি বন্ধন- প্রিয় পরিজন
যে যার মতন বাঁচে,
মানবতা আজ হেরেই গেছে
বাস্তবতার কাছে!

পরবাসী

– কালিদাস রায়

আর কত লোক শোয়াব
ঘর করে ওই মাটিতে,
চোখের জলে নাওয়ায় তারে
মাটির নরম পাটিতে।

আপন পরে নাই ভেদাভেদ,
হাতের পরে এলে,
ওরা যেন খুব শোভা পায়
শুয়ে আমার কোলে।
শ্বেত বসনে অঙ্গ জড়ায়ে
ঘুমে অচেতন,
কেমন জানি দুমড়ে কাঁদে
আমার পোড়া মন।
বাঁশের দোলায় পালকি করে
কত না আরামে,
আপন ঘরে যায়গো তারা
গড়া এক দামে।

সাঙ্গ করি জগত লীলা
পরজগতের আশে,
মায়ার বাঁধন কাটে নারে
অশ্রু জলে ভাসে।

বিধি তোমার কেমন খেলা
খেলছো দিবানিশি,
কেউ চলে যায় আগে-পরে,
আগে-পিছে আসি।

তবে কেন এনে ভবে
মায়ায় পূর্ণ মন
পরবাসী নামটা দিলে
জড়ায়ে এ বাঁধন!

বাবা মায়ের অশ্রু ঝরাও
শূন্য করে কোল,
আগের পথিক পথে বসা;
পরের অনুপল।

সবারই তো যেতে হবে
আশায় বাঁধি বুক,
আগে যারা গেল চলে
তাদের দিও সুখ।


কবি পরিচিতি

কালিদাস রায়। জন্ম জুন ২৪, ১৯৮২ সালে মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামে ।পিতা শিবপদ রায় এবং মাতা সবিতা রায়। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০০ সালে এস এস সি পাসের পর মোংলা সরকারি কলেজ হতে এইচ এস সি ও বি এস এস এবং সরকারি বাংলা কলেজ হতে এম এস এস সম্পূর্ণ করার পর ঢাকা উত্তরাতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে একই গ্রামের মায়া রায় মিতুকে বিবাহ করেছেন – তাদের একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

ছেলেবেলা হতে লেখালেখিতে হাতে খড়ি – গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও পালা নাটক দিয়ে লেখালেখি শুরু। পেশাগত জীবনের ব্যস্ততায় সাময়িক ছেদ পড়লেও এখনও টুকটাক সাহিত্যচর্চার চেষ্টা করে চলেছেন। যান্ত্রিক জীবনের জটিলতা দূরে সরিয়ে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে নিজেদের মানষিক উৎকর্ষ সাধন করুক মানুষেরা এবং সাহিত্যের স্নিগ্ধ প্রশান্তি পৌঁছে যাক গোটা বিশ্বে – এই আন্তরিক ইচ্ছাই তার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা ও জীবনবোধের প্রতিফলন।