দিদি
– সুবোধ চন্দ্র মন্ডল
দিদি হলো জীবনের বড় আশীর্বাদ
হাজার বন্ধুর চেয়েও বেশী মূল্য তার।
দিদির মাঝে জড়িয়ে থাকে মায়াবী প্রকাশ,
সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে তা অনেক বড় উপহার।
দিদি হলো হাজারো ভুলের পরও
বকুনি দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরা,
দিদি মানে জ্বরে ভোগা অসুস্থ ভাইকে
অনেক যত্নে স্নেহ মেখে সেবা করা।
দিদি মানে যতীন্দ্র বাগচীর “কাজলা” দিদি —
বাঁশ বাগানের মাথার উপর উঠবে যখন চাঁদ
রূপকথার ডালি দিয়ে ভাই-বোনের চোখে পাতায়
ঘুমের আবেশ জড়িয়ে পাতে স্বপ্নজালের নানা রঙের ফাঁদ।
সেই ফাঁদেতে ধরা পড়ে গল্প কথার কল্প কত
ঘুমিয়ে পড়ে ভাইবোনেরা, কে আছে আর দিদির মতো?
সে এল চলেও গেল
– সুবোধ চন্দ্র মন্ডল
ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দুতে,
ঢেকে আছে বাড়ির ছোট্ট উঠানের ঘাসেতে।
ভোরের আলোয় সবুজ ক্ষেতে,
শিশিরের ফোঁটা থেকে যেন মুক্তা ঝরে।
এলো তো এলো ভোর
বিদায় জানালো মোরে,
বলে গেল আবার আসিবো ফিরে,
অন্য আবির্ভাবে অন্য প্রকাশে,
থেকো তুমি আমার প্রতীক্ষাতে।
মুহুর্ত বাদে এলো মধ্যদিন
ক্লান্তি ভরা মনে।
তপ্ত হাওয়ায় মর্মরিছে বাতাস
গহণ বনে বনে।
এলো তো এলো মধ্যদিন
বিদায় জানালো মোরে,
বলেছিলো উষ্ণ হাওয়া নিয়ে,
আবার আসিবো ফিরে।
দিনের শেষ অংশটা বুঝি
এলো পড়ন্ত বিকেল হয়ে,
সর্বাঙ্গে অতি গাড় কমলা রং নিয়ে।
বুড়ো সুর্যিমামা তার শেষ শক্তিটুকু দিয়ে,
রেখেছিলো আলোকিত করে,
বাহারি ঐ গোধুলীকে।
বেচারা ক্লান্ত সূর্যটা বড় শিমুল গাছের আড়ালে,
হারিয়ে গেলো আঁধারের মাঝে।
সেদিন মধ্যহ্নে
– সুবোধ চন্দ্র মন্ডল
জানালার ভাঙ্গা কাঁচের ফাঁক দিয়ে
দেখছিলাম আকাশকে।
হটাৎ ভরদুপুরে রবি এসে আকাশকে বলল,
নিত্য থাক তুমি আমার পাশে তোমার ঐ নীল রং ছড়িয়ে,
চিরকাল যৌথ আলিঙ্গনে।
কালো নীরদ ভেলায় করে ভেসে এসে বলে,
ঢেকে দেবো তোমাদের দুজনকে,
নিকষ কালো অন্ধকারে।
আনবো বৈশাখী ঝড়, দেখবে তখন প্রলয়ের শুরু তোমাদের মাঝে।
বর্ষা কহে গুরু গুরু গর্জন শুনি – আসে কোথা থেকে?
বিজলী চমকায় এঁকে বেঁকে মেঘের কোলে!
আমি যদি ঝরি মুষল ধারায়,
থাকবেনা তুমি ঐ রবি ও আকাশের আঙিনায়।
ধরিত্রী আহ্বান করে বর্ষাকে, তুমি নেমে আস অবিশ্রান্ত ধারায়,
আমিতো হারিয়েছি আমার সবুজ অতীত
পুনর্বার ফিরে পেতে চাই আমার হরিৎ সম্পদ।
বনানী ইশারায় কহে ধরিত্রীকে
আমিতো লুটাই তোমার কোলেতে,
শ্যমল সবুজে শীতল ছায়ায়
ফুলের ঘ্রাণেতে মাতিয়ে তুলি তোমাকে।
আর তুমি আছ ময়ীয়ান হয়ে,
সভ্যতার জন্ম দিতে দিতে।
কবি পরিচিতি

সুবোধ চন্দ্র মন্ডল। জন্ম জানুয়ারী ১৫, ১৯৬৩, বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় হলদিবুনিয়া গ্রামে । বাবা স্বর্গীয় শ্রী অশ্বিনী কুমার মন্ডল এবং মাতা ঈশ্বর শ্রীমতি বিল্ল রানী মন্ডল। মোংলার সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয় ও খুলনার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে যথাক্রমে এস এস সি ও এইস এস সি পাশ করার পর খুলনা সিটি কলেজ থেকে ব্যচেলর অব সাইন্স এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওগ্রাফিতে মাস্টার অব সাইন্স অর্জন।
চাকরি জীবন কেটেছে এন জি ও সেক্টর এবং প্রাইভেট কোম্পানীতে। স্বেচ্ছায় অবসরের পর বর্তমানে ফরেক্স এবং ফ্রিল্যান্সিং-এ লিপ্ত। ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। স্ত্রীও একটি এন জি ও-তে চাকরি করছে এবং একমাত্র কন্যা সপ্তর্ষি মন্ডল অদিতি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল ইনিস্টিটিউট থেকে ল্যবরেটরী সাইন্সে ডিপ্লমা শেষ করে এখন অনার্সে ভর্তি হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ছেলেবেলা থেকে কবিতা পড়তে খুব ভালো লাগতো। তার লেখার অনুপ্রেরণা এই পড়া থেকেই। অনিয়মিত হলেও কখনো কখনো কবিতা বা গল্প লেখার চেষ্টা অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটা। তবে নিজেকে কখন কবি বা গল্পকার হিসেবে দাবি করেন না – যা কিছু মন থেকে ভালো লাগে তাই লিখে ফেলেন ভালোমন্দ কিছু না ভেবেই।