দীপক রায় – আমার ছোটবেলা ও স্কুল-জীবন – ১

আমার ছোটবেলা ও স্কুল-জীবন – ১

– দীপক রায়

প্রতিটি মানুষের শৈশব আর কৈশোর নিয়েই তার ছোটবেলা। আমাদের এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রিয় অগ্রজপ্রতীম প্রবাসী ড. অনুপ মজুমদারের বিশেষ উৎসাহে ভাবছিলাম তাঁর সম্পাদনায় “ভাঁটির দেশ” ই-ম্যাগাজিনে কী লেখা যায়! অনেক কিছুই ভাবছিলাম। শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের ছোটবেলা সম্বন্ধে দু’চার লাইন লেখা যেতে পারে। কারণ এর জন্যে আমার স্মৃতি আমাকে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো অকৃপণ হয়ে আমাকে সহযোগিতা করবে। তবে দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সবাই পড়তে আগ্রহী হয় কৃতি মানুষদের জীবনের কথা। এক্ষেত্র আমার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুপদা আমাদের এলাকার প্রকৃত অর্থে একজন কৃতি মানুষ। তাঁর উৎসাহে যার পর নেই অনুপ্রাণিত হয়ে এই অতি নগণ্য বিষয়টা নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। লেখা মানে ফোনে টাইপ করতে বসলাম।

আমার এলাকা ছিলো সাবেক রাম পাল থানার অন্তর্গত। বর্তমানে মোংলা উপজেলার অধীন। আমার গ্রাম মালগাজী। আমার শৈশব থেকে ১৭/১৮ বছর বয়েস পর্যন্ত নিয়মিত আর শেষ দু’বছর অনিয়মিত ভাবে কাটিয়েছি আমার এই গ্রামে। আমার জীবনস্মৃতির সিংহভাগ আমার এলাকার। পরবর্তী কাল থেকে আজ পর্যন্ত ঢাকা শহর জীবনের এমন কোন স্মৃতি নেই যা আমার মনকে সত্যিকার অর্থে স্পর্শ করে। জীবন সংগ্রাম করতে করতে আজ কেন জানি মনে হয় কৈশরের পর থেকে আমার জীবনটা যেন হঠাৎ শেষ হয়ে গেলো। জীবনের এই দীর্ঘ সময় যা করেছি, তার হিসাব যেন খুঁজে পাই না। শুধু বেঁচে থাকা (খাওয়া,পরা,থাকা) আর ছেলে-মেয়ে মানুষ করা। এ কাজ গুলোতে খানিকটা সফল হলেও সময়ের সাথে মনের হিসাব আর পাই না এ পর্যন্ত এসে। মনে মনে ভাবি, গ্রামে থেকে স্কুলে শিক্ষকতা করলে হয়তো জীবন থেকে চলে যাওয়া দীর্ঘ সময়টা অনুভব করতে পারতাম। সকালে স্নান করে খেয়ে পান মুখে দিয়ে ছাতাটা নিয়ে স্কুলে রওনা হওয়া। বিশাল প্রতিপত্তি নিয়ে সারা দিন স্কুলে পাঠ দান। বিকালে বাড়ী ফিরে কিছু কাজ, খেলার মাঠে গিয়ে বসা আর হাঁটা-হাঁটি। এ সবই আমার এলাকার শিক্ষকতা পেশায় জড়িত শিক্ষকদের জীবন থেকে নেয়া আমার ছোট বেলার স্মৃতি-অভজ্ঞতা। এসব বিষয় নিয়ে আমি আমার স্কুলের(সেন্ট পলস্ হাই স্কুল) শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সংগেও সুযোগ পেয়ে অনেক কথাই বলেছি। বিশেষত: অশোক বাবুর সংগে। তিনি এক সময় ছিলেন আমার প্রিয় শিক্ষদের একজন। আজ যেন তিনি আমার বন্ধুও! অবলীলাক্রমে সব কথাই তাঁর সংগে বলা যায়, তিনি বলতে দেন। শুধু মাত্র বয়েস বাড়ার কারণে হয়তো এ যোগ্যতাটুকু অর্জন করেছি, অন্য কোন কারণে নয়। আমার স্কুল আর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নিয়ে এ লেখার পরের অংশে কিছু লেখার ইচ্ছা রইলো।

অতি শিশুকাল থেকে ভাবতাম— অনেক কিছুই ভাবতাম। প্রকাশের সীমাবদ্ধতা ছিলো; তাই মনের মধ্যে যেন মহা যত্নে লালন করে রেখে দিতাম। আজ এপর্যায়ে এসে তা ফুলে ফলে আর নতুন গাছের সৃষ্টিতে বাগানে রূপ নিয়েছে। এ সব স্মৃতি এতো স্পষ্ট যে সেগুলো প্রকাশ না করলে মেমরীতে স্থান সংকুলানের এক ধরণের সংকট দেখা দেয়ার মতো অবস্থা দেখা দিয়েছে। তাই এই লেখার প্রয়াস। (চলবে)


লেখক পরিচিতি

দীপক রায় – পূর্ণ নাম: দীপক কুমার রায়। জন্ম এস এস সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৭ই জানুয়ারী, ১৯৬৩। বৃহত্তর খুলনার অন্তর্গত বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় মালগাজী গ্রামে। বাবা স্বর্গীয় শ্রী ধনঞ্জয় রায় এবং মা শ্রীমতি অমলা রায়। মোংলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় ও খুলনার দৌলপুরে সরকারী ব্রজলাল কলেজ থেকে যথাক্রমে এস এস সি এবং এইচ এস সি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

চাকরি জীবন শুরু ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর, ঢাকায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের জন্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার একটা স্কুলে সিনিয়র ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার হিসাবে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ওই চাকরি থেকে ইস্তাফা দিয়ে বর্তমান পর্যন্ত স্বনিযুক্ত প্রশিক্ষক হিসাবে বিদেশী শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা ভাষার শিক্ষাদানের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। এক ছেলেও এক মেয়ের বাবা। ছেলে সুদীপ্ত রায় ঢাকার একটি বৃহত্তর বেসরকারী হাসপাতালে রেজিস্ট্রার ডাক্তার হিসাবে কর্মরত। মেয়ে শর্মিষ্ঠা রায় পরিবেশ বিজ্ঞানে সম্মান সহ সম্প্রতি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দিয়েছে।

বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিতে গভীর ব‍্যুৎপত্তি ও অনুরাগসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী দীপক রায়। তাই কাজের ফাঁকে নিজের সন্তুষ্টির জন্য লেখা-লেখি নিয়ে সময় পার করেন। ফেসবুকে জীবন ও বাস্তবতা নিয়ে কবিতা লিখে থাকেন প্রতিদিনই, নিয়মিত। গান শোনা তাঁর অন্যতম প্রধান শখ। বিশেষতঃ রাগ প্রধান গান – এ উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ব্যপক আগ্রহ। যখনই অবসর পান গান শুনে সময় কাটানোই তার নিয়মিত অভ্যাস।