ছেলেখেলা
– নরেশ চন্দ্র হালদার
স্মৃতিকাতর মনটা আজও
খোঁজে ছেলেবেলা,
ফিরে পাওয়ার নেই আনন্দ
তবুও সেসব বলা।
হাতে হাতে টর্চ লাইট
সাথে আছে কোচ,
এসব নিয়ে মাছ ধরতে
যেতে হবে রোজ।
শোল, টাকি ধরতে গেলে
লাগবে ছোট বড়শি,
রাত্রি বেলা রস পাড়লে
টের পাবে না পড়শি।
চুরি করা রসের পায়েস
খেতে ভারি মজা,
টের পেলেও দেবে না তাকে
কোন প্রকার সাজা।
নষ্টচন্দ্রের দিনে হতো
বেশি অত্যাচার,
ফল ফলাদি ছিড়ে খাও
হবে না বিচার।
এসব নিয়ে কখনও কারো
ছিলো না মাথাব্যথা,
ছেলেপেলেরা খেয়েছে তো
হবে না বেশি কথা।
বকাঝকা দিতো কিছু
ঐ পর্যন্তই শেষ,
তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে কেউ
পাকাবে না কেশ।
ভাটার সময় সড়াৎ খাওয়া
বেশ মজার ছিলো,
শহরবাসীর জন্য এখন
স্লিপার তৈরি হলো।
কলার ভেলা তৈরি করে
উঠতে হবে তাতে,
আনন্দটাই মুখ্য বিষয়
বন্ধুরা আছে সাথে।
বৌঁচি ফলের মালা গেঁথে
নিতাম মোরা গলে,
খেতে খেতে শেষ হবে তা
যাবে না কারো গালে।
বকুল ফুলের গাঁথা মালা
যায় নি কারো গলে,
গন্ধ শুকে দিন কাটাতাম
গেছি সেসব ভুলে।
খড়ম পায়ের সেই স্মৃতিটা
আজও মনে পড়ে,
ছেলেবেলার হাজার খেলা
ভুলবো কেমন করে।
আমাদের লেখাপড়া
– নরেশ চন্দ্র হালদার
আমাদের যুগে ছিলো
শুধু টেক্সট বুক,
তাই নিয়ে পড়ে থাকা
ছিলো কত সুখ।
ঘরে ঘরে সরবে
হতো বই পড়া,
মন দিয়ে না পড়লে
দিতো সবে তাড়া।
গাইড কিংবা নোটের
ছিলো না বাহার,
পড়া শেষ না হলে
জুটতো না আহার।
কোচিং-এর জন্ম
হয়নি তখন,
শিক্ষক মাঝে মাঝে
দিতো সাজেশন।
বর্ষায় কাদা পায়
স্কুলে যাওয়া,
রাস্তা পিছল হলে
আছাড় খাওয়া।
ব্যাগ নেই, ছাতা নেই
হাতে নিয়ে বই,
দলবেঁধে হেঁটে যাই
কষ্ট তো নেই।
কোন কোন শিক্ষক
ছিলো বেশ কড়া,
বেতের ব্যবহার করতো
না পারলে পড়া।
কান্নার দিন ছিলো
হাতে টিকা নেওয়া,
ঐদিন কেউ কেউ
হয়ে যেতো হাওয়া।
মায়ের কাজ
– নরেশ চন্দ্র হালদার
গাঁয়ের মায়ের অনেক কাজ
সারা দিন ধরে,
সেসব কথা বলবো এখন
একটু একটু করে।
ঝাটা হাতে প্রতি প্রাতে
উঠান দেবে ঝাড়,
এর পর থালা বাসন
ধোয়া কাজ তার।
কলসি কাঁখে জল আনতে
যাবে পাশের গাঁয়,
ভোরের আলো ফোটার আগে
এসব করতে হয়।
গরুর গোয়াল পরিষ্কার
এবার করতে হবে,
দুধের গাই থাকলে বাড়ি
কাজ বেড়ে যাবে।
ভাত রান্না করতে হবে
দিয়ে কাঠের জাল,
ভাদ্র মাসে তার সাথে
গুলতে হবে তাল।
রান্না বান্না শেষ হলে
খাবে পুরুষগণ,
এর আগে মেয়েদের খাওয়া
একদমই বারণ।
আশে পাশে ধান ছাটার
নেইতো কোন কল,
ঢেঁকি ঘরে ঢুকতে হবে
ছাটতে কিছু চাল।
ঢেকি ছাটা চালে আছে
কিছু পুষ্টি গুণ,
অনেক গুনের অধিকারী
তেমনি বেগুণ।
তিন বেলা সময়মতো
রাঁধতে হবে ভাত,
দিনের কাজ শেষ করতে
হবে অনেক রাত।
সবার শেষে শুতে হবে
উঠতে হবে ভোরে,
রুটিন মাফিক চলতে হবে
সারা জীবন ধরে।
কবি পরিচিতি

নরেশ চন্দ্র হালদার। জন্ম অক্টোবর ১০, ১৯৬৬ সালে বাগেরহাট জেলার (তখন খুলনা জেলা) মোংলা থানার (তখন রামপাল থানা) মোংলা পোর্ট পৌরসভা (তখন চাঁদপাই ইউনিয়ন)-র কেওড়াতলা গ্রামে। পিতা হরেন্দ্র নাথ হালদার এবং মাতা সুভদ্রা হালদার।
১৯৭২ সালে সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ঐ স্কুলেই পড়াশুনা। তারপর ১৯৮২ সালে চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস. এস. সি.পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার অইর ১৯৮৪ সালে মোংলা কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. সমাপ্ত। ১৯৮৮ সালে খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান। ১৯৯৩ সালে ঢাকার তেঁজগাঁও কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এড. পাশ। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে খুলনা বি. এল. কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম. এ. পাশ করেন এবং ২০১৫ সালে মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
ছোটবেলার সেই গ্রামবাংলার মাঠ-ঘাট ও প্রতিদিনের জীবনযাত্রা তার স্মৃতিতে এখনো অমর। এইসব স্মৃতি যেমন তার লেখার প্রেরণা, তেমনি তার লেখার বিষয়ও বটে। তার কবিতায় তাই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তপ্রায় গ্রাম্য জীবনের এই সব খুঁটিনাটি প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠকদের পরিচয় হয় সেই জীবনের সহজ-সরল স্মৃতিমধুর ফেলে আসা পুরনো দিনগুলির সাথে।