পায়েল হালদার – কবিতাগুচ্ছ

মন গহীনের কাব্য

– পায়েল হালদার

বুকের ভেতর থমকে আছে আকাশ।
তার একপাশে কৃষ্ণচূড়ার বন,
সারা বছর ফুল ফোটে সেই বনে
আগুন রঙে রাঙিয়ে দিয়ে মন।

তার একপাশেই নীলচে একা নদী
সেই নদীতে ভাটাই কেবল হয়,
নদীর ধারে বিষন্ন এক ডাহুক
তার বুকেতে তৃষ্ণা জেগে রয়।

নদীর পাড়ে প্রাচীন কিছু গাছ
সেই গাছেদের মন খারাপের ছায়া।
সব ছাপিয়ে জোৎস্না হয়ে ডাকে,
মন আকাশে লুকিয়ে রাখা মায়া।।

চিরকুট

– পায়েল হালদার

টলছে মন, সংগোপন
জমছে অচল পদ্যরা,
যাচ্ছে দিন, আসছে রাত
একেকটা দিন খুব খরা।

বেতার খামে, অন্য নামে
পাঠাচ্ছে মন চিঠি রোজ।

বৃষ্টি ফোঁটায়, জোর বাতাসে,
তুমি কি তার পাচ্ছো খোঁজ?

দ্ব্যর্থতা

– পায়েল হালদার

ছাইচাপা আগুনে,
কে এসে দিস ফুঁ
থেকে থেকে ফাগুনে?

ফাগুন তো চলে যায়,
কোকিলরা যায় না।
নিউরন ছিড়ে ফেলে
শকুন? না, হায়না?

হায়না তো বনে ছিল।
মনে তবু আসে কে?
দিনরাত ছিড়ে ফুঁড়ে
কানামাছি খেলে যে?

কানামাছি খেলা নয়?
দ্বন্দ্বটা সাধ্যের?
যতটুকু বাধা যার
তত কি আরাধ্যের?

ইচ্ছেরা আকাশ খোঁজে

– পায়েল হালদার

খুব হাওয়াতে গাছের পাতা নড়বে যেদিন
আমরা সেদিন হাসবো খেলায় অন্য কারোর।
আমরা সেদিন আসবো কাছে সেদিনের আরো
যে দূরের পাখি গায় একাকী সেই সে তারও।

সময় ঘড়ি বন্ধ থাকা
এক দুপুরে
হলুদ রঙে রাঙিয়ে দিতে আসবে মেয়ে।
যেই ঘাটেতে নোঙর ভেড়ায় মানা আমার,
সেই ঘাটেতেই আসব সেদিন নৌকো বেয়ে।

সেদিন তোমায় বকুল মালায় সাজিয়ে দিয়ে
কনকলতায় দেব অঞ্জলি তোমার করে।
হাতের ফাঁকে হাত রাখব এমনভাবে,
তেমনি যেন সারাজীবন রাখব ধরে।
তুমিও সেদিন শক্ত করে হাতটা ধোরো
তারপরে নয় যা খুশি তা বারণ কোরো।

এসব ভেবেই একলা আমার দিন আসে যায়।
ছাড়তে গিয়েও আবার ঢুকি তোমার মায়ায়।
তুমিও কি এক আধ দিন আমায় ভাবো?
না হয় ভেবো, একদিন তো চলেই যাবো।।


কবি পরিচিতি

পায়েল হালদার। জন্ম মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কাইনমারী গ্রামে ৫ই ডিসেম্বর, ১৯৯৩ সালে। বাবা প্রয়াত বিধান চন্দ্র হালদার, মা বন্দনা হালদার। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৮ সালে এসএসসি এবং খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে নিউট্রিশান এন্ড ফুড টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে অফিসার পদে কর্মরত।

বাবা ছিলেন মোংলা অঞ্চলের একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং অভিনেতা, ছিলেন একজন সুবক্তা ও লেখকও। তাই ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক সাংস্কৃতিক আবহে বড় হওয়া। টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু হয়েছে সেই ছোটবেলা থেকেই। শিল্পানুরাগী ও সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠকও বটে। সাহিত্য মানুষের মধ্যে শুভ বোধের জন্ম দিক, সব মানুষ সাহিত্যপ্রেমী হয়ে উঠুক – এই আশাবাদই তার কবিতা রচনার অনুপ্রেরণা।