বিপন্ন মানবতা
– অনিমেষ বিশ্বাস
গল্পের পেছনের গল্পটা
খুঁজিনি হয়তো সময়ের ঘুঁণে,
সভ্যতার জয়যাত্রা সেই যে
পাথর ঠোকা আগুনে।
ডারডুইনের মতবাদে
লেজটা ফেলে কেটে,
গায়ের বুনো পশমগুলো
বেশ ফেলেছি ছেঁটে।
বাকল ফেলে তনু হতে
বসন ভূষণ পরিপাটি,
পশু চর্ম ছাড়িয়ে দারুণ
পা ছোঁয় আর মাটি।
দিনপঞ্জিতে চাকার গতি
সময় রকেটসম ছোটে,
অন্ধকার যুগ পেরিয়ে
সভ্যতার আলো ফোঁটে।
পুর্ব পুরুষ বানর ছিল
ছিল না বুদ্ধি ঘটে,
শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞানের আলোয়
মানুষ হলাম বটে!
কিন্তু সময় বলছে এখন
সবটাই ছিল ফাঁকি,
স্ক্রিপ্টের পেছনের স্ক্রিপ্ট
দেখার আছে বাকি।
চাকচিক্য যা হঠাৎ জ্বলা
হ্যালির ধূমকেতু!
অবয়বে শুধু হয়েছি মানুষ,
সভ্যতার ভাঙা সেতু।
সততা আজ আটকে গেছে
স্বার্থের যাঁতাকলে,
মানবতা বানভাসি আজ
নর্দমার পচা জলে।
শোষণ পোষণ তোষণে ভারি
সভ্যতার অভিধান,
রাম ছেড়ে সীতাকে আজ
ভাঙাতে হয় রাবণের অভিমান।
ক্ষিদের জ্বালায় জ্বলছে চিতা
অনাহারীর মুখে লাথি,
পেট ভরা যাদের, ক্ষিদে বেশি তাদের
নির্লজ্জ এক জাতি।
বিবেক তো সেই কবেই হত
সংযম পুর কথা,
চেতনার লাশ মর্গে এখন
সুরতহালে মানবতা।
ঈশ্বর এখন মৃত
– অনিমেষ বিশ্বাস
সাদা এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ কাঁধে
অপর্যাপ্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সত্ত্বেও;
চব্বিশ ঘন্টাই সেবার ব্রতে,
অমলিন মুখে সারা পৃথিবীতে,
জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে
নির্ভীক এক সত্ত্বা;
যাকে আমরা আজকের ঈশ্বর মানি!
অথচ সারা বিশ্বে সাড়ে চার হাজার ধর্মের
কোনও ঈশ্বর সাড়া দেয়নি
মানুষের এই মৃত্যুর মিছিলে,
আদৌ তিনি জীবিত আছেন কিনা?
সংশয় জাগে , তিনি এখন মৃত!
আর সত্যি যারা ঈশ্বর হতে পারতেন,
তাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি আমরাই।
আমাদের অসচেতনতা, আমাদের মিথ্যা,
জীবাণু বহনের তথ্য গোপনের হটকারিতা,
কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের সমন্বয়হীণতা!
সত্যিই আমরা নির্বোধ মানুষেরাই
এখন সর্বময়, সর্ব শক্তিমান!
ঈশ্বরদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে
আমরা নিজেরা অমর হতে চাই।
উৎসর্গ : ডা. মঈন উদ্দিন । (এই বৈশ্বিক ক্রান্তিকালেও আমরা এই ঈশ্বরদের পিটিয়েও হত্যা করছি। লজ্জা ! লজ্জা ! লজ্জা!)
[দৈনিক ভাটিরদেশ – ডা. মঈন উদ্দিন সিলেট এম এজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম মৃত্যুবরণ করা (১৫ই এপ্রিল ২০২০) ডাক্তার। কোভিড-এ আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে তিনি নিজেই কোভিড আক্রান্ত হন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তাঁর জীবন উৎসর্গিত হয় সেই কোভিডের প্রকোপেই। সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত অমর দৃষ্টান্ত তাঁর এই আত্মত্যাগ।]
ত্রাণ
– অনিমেষ বিশ্বাস
পাঁচ সের চাল, দুটা পেঁয়াজ আর
গোল আলু বড়জোর হবে গোটা চার,
মসুরের মোটা ডাল আছে বেশ কিছু,
হলেও হতে পারে শত গ্রাম মাথাপিছু ।
থলে খানাও মনোরম, গোছানো বেশ
চারিদিকে সুনশান সুন্দর পরিবেশ ,
রথের দড়ি যেন ধরে আছি জনা বিশে,
পরিপাটি নাহলে ছবিখানা হবে ক্লিশে।
হাসিমুখ দুপাটি সাজিয়ে, ডাকঢোল বাজিয়ে,
সেবাতে দিয়ে মন, বুলিতে যেন টিয়ে,
সাজাব জুকারবার্গের ভার্চুয়াল বাগান,
সেবা কি এমন জরুরী দেখাব বদনখান!
গবীরের পেটের আগুনে মধ্যবিত্তও পোড়ে,
এ জাতির ত্রাণ পৌঁছাবে কি আর্তের দোরে?
বস্তা পাল্টে চালের নাম হয়ে যায় নুরজাহান ,
বিবেকের দেয়াল ভেঙে আজ হল খান খান।
গরীবের পকেটের কড়ি প্রণোদনা হয়ে
আনবে কি কোনদিনও সুবাতাস বয়ে?
সে টাকায় ঘুরবে বৃহৎ শিল্পের চাকা,
অসহায়ের মিলবে না দুবেলা অন্নের দেখা।
জাতির ক্রান্তিকালে ত্রাণের নামে প্রহসন
রক্ষকের লোভী জিহ্বায় সদা সুবচন,
পৃথিবীর ইতিহাসে এ নিদর্শন দুর্লভ বটে,
চালের বস্তা চুরি শুধু এ বাংলাতেই ঘটে।
কবি পরিচিতি

অনিমেষ বিশ্বাস। জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং মোংলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী মোংলা কলেজ) হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ হতে প্রকৌশলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশুনা। কোর্স সমাপ্ত করার পর প্রাণ আরএফএল গ্রুপে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে ইইউবি-তে ইইই বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে কোর্সটির শেষ সেমিষ্টারে অধ্যয়নরত।
ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। পড়া থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার – টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। এ পর্যন্ত ছয়টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ভাটিরদেশ অনলাইন পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছেন সহযোগী তথ্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য সাধনায় আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।