পারমিতা ব্যানার্জি- কবিতাগুচ্ছ

জীবনভর স্বপ্ন

– পারমিতা ব্যানার্জি

মুক্তি ছোঁয়া
স্বপ্নগুলো বদ্ধ মনের খিল।।
খুলে দিলে ঝরবে মেঘের দিশে
বৃষ্টি-বাগানে, বইবে সুখ-অনিল!

স্বপ্ন-ছবি __
টইটম্বুর পুণ্যি পুকুর, ঝিল।।
জল-পরীরা সফেদ সাজে এসে
স্নিগ্ধ সিনানে মাতবে অনাবিল।

ও মন তুই __
ছুঁয়ে নে স্বপ্ন-ভোরের বিল ।।
উদাসী রঙে রেঙে বাউল বেশে
জাগবে বিহানে, আকাশ নীল !

ভাবে কবি __
বাস্তব সাথে কাব্যছবি মিল।।
নিঠুর তখন সুন্দর রূপে হেসে
স্বপনে বিলায় খুশির ঝিলমিল !

সরলরেখা

– পারমিতা ব্যানার্জি

যেদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে
সব লেনদেন…
কেউ খুঁজবে না আর
কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি রহস্য!
ডুবে যাব কি ভেসে থাকব
অনন্ত কালিমায় —
আকর্ষণহীনতায়!!!
হিংসা-দ্বেষ-মমতা-প্রেম
থাকবে এক সরলরেখায়॥
কোনো গ্রাফ আঁকা হবে না
জীবন গল্পের —
কোনো যুদ্ধ থাকবে না আর
কেড়ে নেওয়ার!
সেই দিন —
‘আহা কি শান্তি’
এইটুকু বোঝারও অনুভূতি
থাকবে না আর !!!

হঠাৎ বৃষ্টি

– পারমিতা ব্যানার্জি

মনটা আজ উদাস বাউল
মেঘলা দুপুর সাজে!
শীতল হাওয়ায়, রিমঝিম
বৃষ্টি-নূপুর বাজে!

তপ্ত আবেগ জৈষ্ঠ্য মাসে
পাগল প্রেম-নেশায়!
বকুল গন্ধ চাইল সোহাগ
মেঘ ময়ূরীর দিশায়!

শুষ্ক ধরা ভিজল খানিক
পেলব কাব্য সাঁঝে!
আড়াল-কথা মুক্তি পেল
প্রেম চিঠিরই ভাঁজে!

শেষ বিচারের অপেক্ষা

– পারমিতা ব্যানার্জি

আঁধার নেমে এসে
ঢেকে দেয় ছায়ার চঞ্চলতা।
ঘুম রাত জেগে থাকে
পেলব শিহরণে!
থাক্ না…
মরুভূমির তপ্ত বালুঝড়,
তীক্ষ্ণ শলাকা বিঁধিয়ে যায়
গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে।
কি যে সুখ পায়….!
বৃথাই শান্তির খোঁজ,
মরীচিকায় ।

ঈশান কোনে মেঘ জমে।
উষ্ণতায় শুকায়
খাল-বিল, অন্তর আত্মা!
নভো সুখে উর্ধ্বপানে
মুখ তুলে চাতক!
জল দাও জল দাও…

নগ্ন পায়ে আলপথে
কিশোরীর সবুজ হিল্লোল।
ধানের শিষের সুচারু সুচাগ্র!
পঙ্গপালের শষ্য লোভে
ঘন কালো আকাশ
থমথমে….
চিৎকার চাপা পড়ে দাবানলে।
আত্মগ্লানি!!!
সবুজ মনের সমাধি…

ধ্রুবতারা বলে যায়,
“সব সত্যি”__
শুধু বিচারের অপেক্ষায়
আদালত!!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।