আরও কত পথ
– তমাল ব্যানার্জি
কোথায় চলেছ
আবহমান কাল ধরে….
কখনো সাম্রাজ্যের
বিজয় রথের চাকা,
বয়ে নিয়ে গেছো
এক সভ্যতা থেকে
অন্য সভ্যতায়।
ফলিয়েছ বঞ্জর জমিতে ফসল।
শ্রমের বিনিময়ে তৈরি করেছো
স্থাপত্যের ইমারত…
তোমার নির্মিত স্থাপত্যে,
যখন ঝাড়বাতি শোভা পায়,
তোমার জীর্ণ কুটিরে
হাজারো ছিদ্রে
চাঁদের আলো বিদ্রুপ করে।
কত সাম্রাজ্যের হয়েছে পতন,
তবুও শেষ হয়নি শোষণ।
এখনও শাসকের অঙ্গুলি হেলনে
দিয়ে যাও শ্রম,
বিনিময়ে শুধুই নিষ্পেষণ।
কখনও বুকের ভিতর থেকে
লাভাস্রোত গড়িয়ে এসে
সমাজের পঙ্কিলতায় মিশে
তৈরি করে বুদবুদ!
আর থেকে যায় শুধুই ধোঁয়া…
সংযমী থেকেছো তুমি।
মাথা নত করে সয়েছো যত অন্যায়।
বোঝনি, অন্যায় যে সহে,
সেও সমান দোষে দোষী।
যাবার আগে
– তমাল ব্যানার্জি
সকালের সোনালী রোদ
স্পর্শ করেছে আমার চোখ।
দুই শালিক আসেনি আজ জানালাতে ।
দাঁড়কাক ডেকে গেছে
চিলেকোঠায় বসে।
ভয় দেখেছি
আমার প্রিয়ার চোখে।
ধরিত্রী নতুনকে করে আহ্বান।
বলে গেল, আর নাই স্থান,
আর নাই স্থান।
জানি চলে যেতে হবে আমাকে,
তবু বড় লোভী আমি….
হে ঈশ্বর, কায়াহীন করে দাও আমাকে।
কায়াহীন হয়ে থাকতে দিও
এ সুন্দর ভুবনে।
যেখানে শঙ্খচিলের ডানায়
সোনালী রোদ ঝরে,
যেখানে ফুলেরা হাসে
বাতাসের হিল্লোলে,
মৌটুসি ফুলে ফুলে মধু লোটে।
আর, আমি দেখব প্রিয়াকে,
স্পর্শ করব না তাকে।
প্রিয়া আমার…
যাবার আগে শুধু একবার,
আরক্ত আনত মুখে,
তোমার ওষ্ঠের পরশ দিও…!!!
পৃথিবী শান্ত হোক
– তমাল ব্যানার্জি
মাটির তলায় গড়েছ
পরমাণু অস্ত্র ভান্ডার।
অন্তরে বইছে
ফুটন্ত লাভার স্রোত।
হৃদয়ে জমেছে এত গরল,
মন্থনেও তা হয়না অমৃত!
মানুষে মানুষে এত বিদ্বেষ…
তবে কি প্রলয় নিশ্চিত!
আবার হয়ত…
আদম-ইভ জ্বালাবে চকমকি ।
মানবতা আজ পড়ে আছে
হৃদয়ের এক কোণে,
পরমাণুর মতো, হয়তো নিষ্ক্রিয়!
এসো কবি,
এখনও সময় আছে,
হাতে হাত রেখে
ভেঙে ফেলো মনের বেড়া।
টুটে যাক সীমান্তের
যত কাঁটাতার।
তোমার করস্পর্শে হৃদয়-অন্দরে
ঘটুক পরমাণু বিষ্ফোরণ।
বিষবাষ্প নয়,
শুধু নির্গত হোক সেই ধ্বনি।
যে ধ্বনি আকাশ বাতাস
মুখরিত করে বলবে,
এ দেশ আমার নয়, তোমার আমার।
এই পৃথিবী তোমার আমার।
পৃথিবী শান্ত হোক……
কবি পরিচিতি

তমাল ব্যানার্জি। জন্ম তারিখ ৫ই এপ্রিল, ১৯৫৭। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার একটি শহর চন্দননগরে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা ঈশ্বর সুধীর ব্যানার্জি ও মাতা সুশীলা ব্যানার্জি। চার ভাই এর মধ্যে আমি জ্যেষ্ঠ। আমার সহধর্মিনী পারমিতা, পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ যৌথ পরিবারে বাস করি।
আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। আমার পিতাও শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ভালো বক্তা ও ভালো লেখক ছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই আমার লেখালিখি। অবসর গ্রহণের পরেই বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া ও থেমে থাকা লেখার পথচলা শুরু।