আর কতবার মারবে
– আসমা আক্তার কাজল
তোমরা আমায় আর কতবার মারবে,
কতবার হবো আমি জীবন্ত লাশ?
আমি তো সেই কবেই মরেছি
বাবা-মাকে সবে যখন চিনতে শুরু করেছি।
আমি তো সেই অবেলায় মরেছি
যখন আমার পিতার রক্তে
রঙিন হয়েছিলো রাজপথ,
পিতা হারানোর শোকে
চিৎকার করে কেঁদে ছিলাম,
সেদিনই আমি প্রথম মরে ছিলাম।
আমায় আর কতবার মারবে,
কতোবার কেড়ে নিবে বাঁচার অধিকার?
নিজের সুখের জন্য আমার কচি হাত ছেড়ে
মা যেদিন চলে গেলো অন্য ঘর
সেদিন আমার মরণ হলো পুনরায় দ্বিতীয় বার।
আমায় আর কতবার মারবে,
আর কতবার মানুষরূপে বাঁচবো হয়ে জানোয়ার?
ক্ষুধার জ্বালায় ডাস্টবিনে
কুকুরের সাথে যেদিন খেয়ে ছিলাম খাবার
সেই মুহূর্ত্বে মৃত্যু হলো আমার আরো একবার।
আমায় আর কতবার মারবে,
কতোবার হবো আর শকুনের শিকার?
বাসার মালিকের বখাটে ছেলের
যখন হই কামনার আহার
সেই ক্ষণে শতভাগ পূর্ণ হয়েছে মৃত্যু আমার।
আমায় আর কতবার মারবে,
আর কতবার বেঁচে উঠবো নতুন করে আবার মরার?
আমি তো প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে মরি বারংবার;
প্রকৃতি, সমাজ, সংসার এমনকি সভ্যতার কাছে
আমি তো মরে চলেছি সহস্রবার।
তোমার ঠোঁটের ভাঁজে
– আসমা আক্তার কাজল
চন্দ্রিমা রাতের স্নিগ্ধ আলোয়
মুগ্ধ হয় সকলে,
আর আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম
তোমার ভ্রমর কালো চোখের মায়ায়।
তোমার চোখের মনিতে আমি এতোটা আলোকিত হই যে
মনে হলো আমার চার পাশে
অবিরাম খেলা করে চলেছে
একদল জোনাকি পোকা।
স্বর্গের অপরূপ সুখ কেমন হয় জানি না;
কিন্তু তোমার স্পর্শে আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে
যে কম্পন সৃষ্টি হয়ে ছিলো,
সেই কম্পনকে মনে হলো বারংবার
ধরণীর বুকে এই হলো স্বর্গীয় সুখ আমার।
তোমার ঠোঁটের ভাঁজে ভাঁজে
আমার সকল তৃপ্তি, সাধ ও কামনা স্বযত্নে লুকিয়ে আছে,
আমি ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মিলনে
তোমার বুকের সর জমিনে গড়ে তুলব
স্বর্গীয় সুখের প্রকৃতি।
সোনালী ভোরের শুভ্র ঘ্রাণ
– আসমা আক্তার কাজল
গভীর রাতের কোমল হাওয়া হঠাৎ থমকে গেলো ;
অসংখ্য তারকামালা যেন আলো হারালো;
আর আমার বুকের ভিতরটা ফুলে উঠেছে
সমুদ্রের মতন,
পৃথিবীর সমস্ত মমতা উড়াল দিলো
যেন আকাশের উদ্দেশ্যে
নীল হাওয়ায় বিষে যখন দেখলাম
জননী আমার পলকহীন ভাবে চেয়ে আছে!
অন্ধকার রাতে এক বিন্দু আলোর নিচে
শিশিরভেজা ঘাসের মতো
ঝলমল করছিলো দু’চোখ ঘিরে।
ডানাহীন পাখি যেমন আকাশ সীমানায় তাকিয়ে
ছটফট করে
তেমনি ছটফট শুরু হয়ে ছিলো
আমার আকাশের বিস্তীর্ণ ডানা
ঝরে গেলো ভেবে।
হঠাৎ এক দীর্ঘ শ্বাসের করুণ আওয়াজে
বিশাল আকাশ জ্বলজ্বল করে উঠে!
জানালার ফাঁক দিয়ে শাঁই শাঁই করে
একরাশ হাওয়া এসে আমায় শীতল করে।
যখন জননীর মুখে প্রিয় ডাক আমার কানে বাজে;
সুখের বন্যায় দিগন্ত প্লাবিত হয়ে
আমার হৃদয়ে ছড়ালো সোনালী ভোরের শুভ্র ঘ্রাণ।
কবি পরিচিতি

আসমা আক্তার কাজল। ছেলেবেলা কেটেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলার কেওড়াতলা গ্রামে, ধীরে ধীরে বড় হয়েছি ছায়া-নিবিড় এই গ্রামের শীতল ছায়ায়। আমার কাব্য ভাবনার অঙ্কুরস্থলও এই গ্রামের মায়াময় শ্যামল পরিবেশ। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি শুরু। আদি বাড়ি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার গরিয়াবুনিয়া গ্রাম। পিতা মোঃ মকবুল হোসেন, মাতা রহিমা বেগম। পারিবারিক জীবনে বাবা, মা, ভাই, বোন, ভাবি, তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে আমাদের যৌথ পরিবার।
কবিতা পড়তে ভালো লাগা থেকেই আমার নিজস্ব মনে সেই কিশোরী বয়সেই লেখা শুরু। বই পড়া ও ছবি আঁকা – উভয়ই আমার খুবই পছন্দ ছিলো। লেখার অভ্যাসটা ইদানিং কেমন যেন রক্তে মিশে গিয়েছে – কলম খাতা নিয়ে না বসলে ভালোই লাগে না। এতদিন ছিলো কেমন যেন লেখা লেখা খেলা, তবে এখন চেষ্টা চলছে ভালো কিছু লিখে পাঠকের হৃদয়ে ঠাঁই নেওয়া। আমার কবিতা যদি কারো মনে একটুও ঠাঁই নেয় অথবা ভাবনার সৃষ্টি করে সে হবে আমার লেখার স্বার্থকতা ও কাব্য জগতে চলার পথে আমার অন্তর প্রেরণা।