আবার কখনও
প্রথম দেখা তোমার সাথে, ফ্লাইটে।
আমার স্থায়িত্ব দুদিন ফ্রান্সে,
তোমার পক্ষকাল।
প্রচণ্ড গতি নিয়েই কাছাকাছি,
যেন আকাশপথে বোয়িং বিমান।
এক মধুর হাসি উছলে পরেছিলো-বলেছিলে,
নটিবয়ের দেখা ক্যালকাটায় পাই যেন!
আমার ঠোঁটে এঁকেছিলে ছোট্ট চুম্বন,
মাতাল করা মনপেয়ালা মদিরায় ভরপুর,
টালমাটাল অবস্থায় হোটেলে ফিরলাম।
এখন আমি কোয়ারেন্টাইনে বন্দী,
ওখানেই শুনেছি তোমার মৃত্যুসংবাদ!
আমিও কিন্তু পজেটিভই,
অথচ আমরা কেউ জানতামই না,
করোনা ভাইরাসের করালগ্রাসের কোনো হদিশ ।
প্রণয়পাশা
চরিত্র খোঁজায় একটা নেশা আছে
ফুল ঝরে গেলেও দেখি
চাঁপার গন্ধ কিন্তু অম্লানই থাকে
যেন চাঁপাডাঙার নতুন বৌটি!
গাছটা যদিও এখন কঙ্কালসার
তবুও মাঝে মাঝে ঠিক গন্ধ বিলোয়
বাঁচার তাগাদা তো শুধু নিজের জন্যে নয়,
পুষ্যি ছোটবড়..
একদিন সকালে হাসনাহেনা ফুটেছিলো
অগোছালো এই প্রাঙ্গনে আমার
তখনও কি বৃষ্টি হচ্ছিল
মনেও পড়েনা।
প্রাণভরে গন্ধ নিয়েছিলাম
বড় ইচ্ছে হলো ফুলদানিতে রাখি,
রাখলামও…
ভালোই লাগছিলো
শোভাও বাড়ছিল ঘরের কিছুটা
সহ্য হলো না
মধুকরের আনাগোনা শুরু হতেই
শুধুমাত্র প্রানে বাঁচবার জন্যে
ফুলদানি খালি করতেই হলো।
গল্প আর কাহিনী হলো না…
এভাবেই শুকিয়ে যায় নদীপথ সাগর না পেয়ে,
সব কথা কি আর ইতিহাস হয়…
ভাঙনের বুকে
তবু ওই ভাঙনের ঘনঘটা
নদী তীরে চলছিলো,
তাবুতেই থাকা পরিবারগুলো
শুধু জোড়াতালি দিলো।
ছাউনি মাথায় থেকেও চিন্তায়;
অস্তিত্ব না মুছে যায়!
এতটুকু দয়াও নদীর প্রাণে
বুঝি সইলো না ধাতে,
অনবরতই তলিয়ে চলছে
ভাঙনের হেফাজতে,
প্লাবিত জলের তোড়ে চারপাশ,
চোখেতে ভিসুভিয়াস।
আর কেউ রইলো না অপেক্ষায়,
মানুষটা ভাঙা বলে!
গড়ার কথা ভাবতে ভাবতেই
তলিয়ে গেল অতলে।
দূর হতেই হাতছানি লোকটার
অতৃপ্ত কণ্ঠিমালার।
চোখের চামড়া
মচ্ছব লেগেছে, জোয়ারের জলে বন্যা,
পাশাপাশি দেখছি অনাহারে শিশু কন্যা…
খেদানো মজুর আদুর গায়ে, মৃতপ্রায়,
জানে না বলে ওরা শুধুই রোগ ছড়ায়…
শ্রম বেচে খাবে,কোথায়বা কলের গান?
মালিকরা সব হাতধুয়ে আজ সাবধান …
তাতেও যারা দেখছে লক্ষ্মী অনুকূলে,
আঘাত কি আর আসবে সেই চরণমূলে?
পৈশাচিক নৃত্য চলেছে মূল বেদী ঘিরে,
এত কান্না! তবুও কেউ দেখছে না ফিরে…
অতল জলের আহ্বান
দু’পাতার ঘেরাটোপে আকাশনীল তারা,
দিনাবসান হলেও কানায় কানায় ভরা…
অলিন্দের পদ্মগোলাপও তাপপ্রবাহে,
অতল যাত্রার অনুন্নত এক অবরোহে…
গামছা নিংড়োনো চুলে ভরা জোয়ার,
দিন চলে গেলেও ভাবনা কেন আবার …
বর্ষাশেষে অপেক্ষা রোদ্দুরের সাহারা,
পুরোনো কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা…
সদর্পে টাইটানিক ভাঙবে আইসবার্গ,
অবাক চোখে দেখলাম কলঙ্কের দাগ…
এভাবে ডুবে যাওয়া শুধু অতল অতলে,
এও কি আর শান্তিপারাবার বলা চলে…
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।