অনেকেই – এমনকি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাও – নিজের সততার প্রমাণ দিতে গিয়া বলিয়া থাকেন যে সাদাকে তিনি সাদা আর কালোকে তিনি কালো বলিয়া থাকেন। আরে এই বাক্যের দ্বারা তিনি নিজেকে সৎ ও দূর্নীতিমূক্ত হিসাবে সবার কাছে নিজেকে তুলিয়া ধরিতে চাহেন। যিনি বা যাহারা সাদার মধ্যে কুয়াশা দেখেন তাহারা ঘোলা জলে মাছ ধরিবার চেষ্টা করেন এবং এই বিষয়টি অসততা ও দূর্নীতির প্রতিফলক।
একটি প্রশ্ন করা যাইতে পারে। এ পৃথিবীর সব কিছুই কী সাদা-কালোয় চিত্রিত? এক সময় হয়ত “সাদা-কালো”-র যুগ ছিলো এ পৃথিবীতে – ক্যামেরা শুধু সাদা-কালো ছবিই তুলিতো। কিন্তু এখন যে আছে এমন বলা যাইবে কেমন করিয়া? বিজ্ঞানের উন্নতি ও প্রজ্ঞার অগ্রগতির সাথে সাথে সব কিছু এখন নানা রঙে রঙিণ। এখন আর কেহ সাদা-কালো ছবিতে খুশী থাকিতে চাহেন না – সবাই বর্নাঢ্যতার অনুসন্ধান করিয়া বেড়ান। এখন রঙ ছাড়া জীবনের স্তরে কেহ আর পূর্ণতা খুঁজিয়া পান না। বর্তমান যুগে যেখানে যে অবস্থানে আছে বা থাকেন সেখানে এখন বর্ণের ছড়াছড়ি। এতদিন মানুষ আকাশের দিকে চাহিয়া থাকিত তখন একটু বর্ণালী দেখিতে পাইবেন। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও সম্পদের আধিক্যের যুগে মানুষকে আরে দূরে যাইতে হয় না – শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল অট্টালিকার মধ্যে সেই বর্ণালী বৈচিত্রকে নিজের খুব কাছের করিয়া ফেলিয়াছেন। এখন আর সেখানে সাদা-কালো শুধু কথার কথা।
ইহা কেন বলা হইল তাহা লইয়া একটুও ভাবিতে হইবে বলিয়া মনে হয় না। আজকাল দেশের সরকারী অফিস-আদালত ও অনেক প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতিমুক্ত ও জিরো টলারেন্স লিখিত সাইনবোর্ড ঝুলিতে দেখা যায় বলিয়া শুনিয়াছি। কেহ ঘুষ দিবেন না এবং কেহ ঘুষ চাহিলে উর্ধতন কর্ত্তৃপক্ষকে অবহিত করুন – এমন বলা হইয়া থাকে। অনেক স্থানে আবার ক্যামেরা রহিয়াছে যেন ঘুষের কারবার ধরা পড়ে। ইহা বিরাট নিশ্চয়তার ব্যাপার। নিয়মের ভিতর থাকিয়া যাহা হ্যাঁ তাহা হ্যাঁ হইবে এবং যাহা না তাহা না থাকিবে – অর্থাৎ সাদাকে সাদা বলিতে হইবে এবং কালোকে কালো বলিতে হইবে – ইহাই প্রত্যাশিত।
বাস্তবে কি তাহা আদৌ হইতেছে? এই প্রশ্নটির উত্তর সকলেরই জানা। নতুন করিয়া বা খোলসা করিয়া বলিবার প্রয়োজন আছে মনে হয় না। কিন্তু ইহার কারণ কী সে সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলা যাইতে পারে। খুব সম্ভবতঃ ইহার কারণ আর কিছুই নহে – ইতিমধ্যে বলা হইয়াছে পৃথিবী আজ রঙিণ হইয়াছে – তাই সব কিছুতে একটু রঙ ছিটানোর প্রয়োজন। রং না হইলে বৈচিত্র কোথায়? এখনকার যুগে বৈচিত্র সৃষ্টি করিতে না পারিলে অগ্রগতি হইবে কেমন করিয়া? কোন কিছু নড়িতে হইলে বা নাড়াইতে চাইলে বৈচিত্র সৃষ্টি করিতেই হইবে। আর বৈচিত্র সৃষ্টি করিতে হইলে কিছুটা অতিরিক্ত অবদানের প্রয়োজন। এখন সাদা-কালোর ছবির যুগ নহে – তাই এই “অতিরিক্ত অবদান”-কে ঘুষ বলা চলিবে না। এই বর্ণালী-বৈচিত্র এখন সব ক্ষেত্রে সর্বদা অত্যাবশ্যক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তবে কাহারো কাহারো একটু অসুবিধাতো হইবেই – যিনি দূর্বল ও গরীব তিনি আরো গরীব হইবেন এবং যিনি ক্ষমতাবান ও ধনী তিনি আরো ধনী হইবেন – ইহাতে অন্য কিছুর গন্ধ থাকিলেও থাকিতে পারে, কিন্তু বর্তমান যুগে ইহাতে আশ্চর্য হইবার কিছু আছে কি?
শত হইলেও প্রত্যাশা এক আর বাস্তবতা ভিন্ন আরেক বস্তু।