করোনা ভাইরাস চীনের উহান থেকে মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের যাত্রা শুরু।২০১৯সালের ডিসেম্বর মাসে। ।অপরিচিত এবং অলক্ষ্যে থেকে এই মারণ ভাইরাস এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি মানুষকে সংক্রমিত করেছে এবং ছয় লক্ষেরও বেশী মানুষের জীবন হরণ করেছে। করোনার আবির্ভাবের পর আজ প্রায় সাত মাস হতে চললো, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কীভাবে এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্ভব সে সম্পর্কে কোন সমাধান আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এখনো এই ভাইরাসের দংশন অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনার প্রভাব প্রথমদিকে তেমন লক্ষ্য ন করা গেলেও এখন ধীরে ধীরে তা ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ওয়ার্ল্ডমিটারে পরিসংখ্যান অনুযায়ী আজপর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে দুই লক্ষ লোক আক্রান্ত এবং মারা গিয়েছে দুই হাজার ছয় শতের মত। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবর অনুসারে বাংলাদেশের অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি এবং অনেক চিকিৎসাকর্মী রয়েছেন এই মৃতের তালিকায়। অর্থাৎ করোনা ধনী-মানী-গুনী কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না এবং এখনো আয়ত্বের মধ্যে নয় বাংলাদেশে – বরং প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে।
করোনা একটি স্বাস্থ্য সংকটই শুধু নয়। করোনা মানবিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, মনস্তাত্বিক ইত্যাদি নানা ধরণের সংকটে পরিনত হয়েছে। করোনা খুব সহজে সংক্রমিত হয় – তাই সবাই অত্যন্ত আতংকিত। কারো করোনা হয়েছে এমন জানলে সবাই তাকে এড়িয়েতো চলেই বরং অনেক সময় সে নিগ্রহের শিকার হয়। এছাড়া করোনার কারণে চিকিৎসা সংকটও দেখা দেয় – কোন ডাক্তার বা চিকিৎসাকর্মী তার পরিসেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই যে প্রত্যাখান, চিকিৎসা সংকট এবং ভয় একজন করোনাগ্রস্থ ব্যক্তির হতাশা আরো বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া করোনা রোধে সামাজিক দূরত্ব বা আসোলেশনে থাকার জন্য সুস্থ ব্যক্তিদেরও মনে মনস্তাত্বিক সংকট দেখা দিচ্ছে। কাজকর্ম বন্ধ থাকায় বা বিশেষ তেমন কাজের অভাবে অনেক লোকে – বিশেষত দেশের মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষেরা অভাবের মধ্যে রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় সরকারী সাহায্য অপ্রতুল। অনেকে ব্যক্তিগত বা সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু সহযোগিতা বা খাদ্য-খাবার বিতরণ করছেন – কিন্তু দুএকটি ক্ষেত্র বাদে অধিকাংশ সময়ে এসব সহায়তা দেয়া হচ্ছে প্রচারের উদ্দেশ্যে।
একদিকে বাংলাদেশে করোনার মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব।রয়েছে, তার উপর করোনা নিয়ে নানা রকম দূর্নীতিও চলছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে এবং বেশ কিছু তথাকথিত গন্যমান্য ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে দূর্নীতির দায়ে। একদিকে এরা বাইরে জনদরদী, স্বচ্ছ মানুষের ইমেজ গড়ে তুলছে কিছুটা দান-ধ্যান করে খোলসের ভিতরে আসল ইমেজ ঢেকে রেখে, অন্যদিকে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষদের এরা প্রতারিত করে ও বিপুল সরকারী বরাদ্দ আত্মসাৎ করে নিজেদের আখের গোছানোর ব্যবস্থা করেছেন। তবে করোনা নিয়ে এই দূর্নীতি যে বাংলাদেশেই হচ্ছে তা নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ – এমনকি আমারিকার যুক্তরাষ্ট্রেও – এই ধরণের দূর্নীতিবাজদের থেকেও মুক্ত নয়।
করোনার এই সংকট ছাত্র-ছাত্রীদের উপরও বেশ সুস্পষ্ট। লেখাপড়া এখন বন্ধ – ভবিষৎ অনিশ্চিত। তাছাড়া এখন যাদের বয়স স্কুলে সময় কাটাবার এবং ভবিষতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তোলবার, তাদের জন্য এই স্কুলছাড়া সময়টা অন্যদিকে ব্যয় করে পড়াশুনার প্রতি অনাগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে এবং সারাদিন বাড়িতে সময় কাটাবার ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা ঘটাতে পারে।
এখনো যদিও হতাশার অন্ধকয়ার, তবুও তার মধ্যে বেশ কিছুটা আশার আলোও দেখা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং করোনার বিভিন্ন উপসর্গকে আরামযোগ্য করার ক্ষেত্রে উপকারি হিসাবে কয়েকটি ঔষধ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া করোনার টিকা আবিস্কারের পথে পৃথিবী অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে এবং অনেকগুলি টিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ পর্যায়ে। অনেক বিষেশজ্ঞের ধারণায় এ বছরের শেষের দিকে এই টিকা বাজারজাত সম্ভব। আমাদের আশা রইলো পৃথিবী আবার সুস্থতার পথে খুজে পাক এবং করোনার কারণে উদ্ভুত বহুমুখী নানাবিধ সংকট কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠুক, মুক্ত আলোবাতাসে আবার সবার জীবন হোক আনন্দ-হাসিতে উচ্ছ্বল ও উজ্জ্বল প্রাণময়।